দুই গৃহবধূ, ছাত্রসহ চারজন খুন
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় তহুরা খাতুন নামের এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। নড়াইলের কালিয়ায় শাবানা খানম নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এদিকে খুলনায় কাঠ ব্যবসায়ী শামসুল হককে কুপিয়ে এবং পটুয়াখালীর বাউফলে মো. লালন নামে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এসব ঘটনা ঘটে। আমাদের আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
চুয়াডাঙ্গা: বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার মহাম্মদজমা গ্রামে তহুরা খাতুন (৩০) বাবার বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় স্বামী মো. আকাশ হোসেন তাঁকে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যান। রাতেই ঘটনাটি জানাজানি হলে আলমডাঙ্গা উপজেলার তিওরবিলা গ্রাম থেকে তহুরা খাতুনের স্বজনেরা আকাশকে ধরে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ করেন। আকাশ তিওরবিলা গ্রামের বাসিন্দা।
নিহত নারীর মা জাহানারা বেগম বলেন, ছয় মাস আগে ছোট মেয়ে তহুরার সঙ্গে আকাশের বিয়ে হয়। ব্যক্তিগত জীবনে তহুরার আগের পক্ষের ইমতিয়াজ নামে ১০ বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে।
বাবা জবেদ আলী বলেন, যৌতুকের দাবিতে কয়েক দিন ধরে জামাই মেয়ের ওপর নির্যাতন করে আসছিলেন। গত বুধবার তিনি স্বামীর বাড়ি তিওরবিলা থেকে মহাম্মদজমা গ্রামে চলে আসেন। ওই দিনই জামাই চারজন গ্রামবাসীকে নিয়ে মহাম্মদজমা গ্রামে আসেন এবং মেয়েকে নিয়ে যেতে চান। মেয়ে যেতে অপারগতা জানালে বিষয়টি নিয়ে আগামী বুধবার সালিসের দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু এর আগেই আকাশ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘুমন্ত তহুরাকে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যান।
নড়াইল: বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিয়া থানার সালামাবাদ ইউনিয়নের নলাডাঙ্গা গ্রাম থেকে শাবানা খানমের (১৮) লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাঁর স্বামী নয়ন খান (২৮) পলাতক।
শাবানার বাবা আতোশ খন্দকার বলেন, ‘বিয়ের পরপরই বাপের বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য নয়ন শাবানাকে নির্যাতন করত। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে আমার কাছে চলে আসে। নয়ন নানা কৌশলে পরে শাবানাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। এরপর আমার মেয়েকে হত্যা করে লাশ গ্রামে নিয়ে আসে। আমি এর বিচার চাই।’
কালিয়া থানার ওসি আবদুল গণি মিয়া বলেন, যেহেতু ঘটনাটি আশুলিয়া থানা এলাকার, তাই তিনি জিডি করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আইনি সহায়তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, শাবানার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাউফল (পটুয়াখালী): জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়নের ছত্রকান্দা গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে মো. লালনকে (১৫) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। লালন উপজেলার আনারকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, ওই গ্রামের মো. ইউনুচ প্যাদার সঙ্গে একই বাড়ির এনামুল প্যাদা ওরফে মালা প্যাদার বিরোধ চলে আসছিল। ওই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মালা প্যাদার (৪৫) নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন ইউনুচ প্যাদার ঘরে হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যকে গুরুতর জখম করে। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে সজীব ও লালনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পথে লেবুখালী এলাকায় লালন মারা যায়।
খুলনা: আড়ংঘাটা থানার ওসি নাসিম খান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর ইউনিয়নের শলুয়া কালীবাড়িতে উল্টো রথযাত্রার মেলা শেষে শামসুল হক বাড়ি ফিরছিলেন। পথে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে নালার মধ্যে ফেলে রাখে। স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত একটার দিকে তিনি মারা যান। তিনি নগরের দৌলতপুর মধ্যডাঙ্গা প্রামাণিক পাড়া এলাকার মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে। তিনি কাঠের ব্যবসা করতেন।