দুই পুলিশের বিরুদ্ধে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ
>
![প্রতীকী ছবি](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2018%2F03%2F18%2Fcc1107dbb1c246a9093a95ef8df7e78e-5aae1122a6fb1.jpg?auto=format%2Ccompress)
*আটকে রেখে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ
*তরুণী এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন
*ঘটনা তদন্তে কমিটি হয়েছে
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক তরুণীকে (২০) আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার ওই তরুণী জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে গত শনিবার রাতে অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন এসপি। ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগ ওঠা পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন সাটুরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার হোসেন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাজহারুল ইসলাম।
ওই তরুণীর বাড়ি পটুয়াখালীতে। তিনি বাবার সঙ্গে সাভারের আশুলিয়ায় থাকেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার বিকেলে পূর্বপরিচিত এক নারীর সঙ্গে তিনি সাটুরিয়া থানায় যান। ওই নারী এসআই সেকেন্দার হোসেনের কাছে টাকা পান। থানায় যাওয়ার পরপরই সেকেন্দার তাঁদের থানার পাশে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে একটি কক্ষে বসে পাওনা টাকার বিষয়ে কথাবার্তা বলার সময় এএসআই মাজহারুল উপস্থিত হন। এরপর ওই নারীকে একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। আর তাঁকে (তরুণী) পাশের আরেক কক্ষে নিয়ে ওই কর্মকর্তারা ইয়াবা সেবন করেন। এ সময় তাঁকেও ইয়াবা সেবনে বাধ্য করা হয়। ইয়াবা সেবনের পর তিনি অসুস্থ বোধ করেন। এরপর শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ওই কক্ষে আটকে রেখে ওই দুই কর্মকর্তা তাঁকে কয়েক দফায় ধর্ষণ করেন। এরপর তাঁদের দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তরুণীর সঙ্গে থাকা ওই নারী উত্তরবঙ্গগামী বাসের টিকিট বিক্রির কাজ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এসআই সেকেন্দার আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকার সময় তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয়। সে সময় পরিবারসহ সেকেন্দার আশুলিয়ায় থাকতেন। একই এলাকায় থাকার সুবাদে সেকেন্দারের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রায় পাঁচ বছর আগে জমি ব্যবসার জন্য তিনি সেকেন্দারকে এক লাখ টাকা দেন। জমি বিক্রির পর লভ্যাংশসহ তাঁর সেকেন্দারের কাছে তিন লাখ টাকা পাওনা হয়। তবে দীর্ঘদিনেও তাঁকে সব টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে ওই টাকার জন্য তিনি মাঝেমধ্যে সাটুরিয়া থানায় সেকেন্দারের কাছে যেতেন। গত বুধবারও পাওনা টাকার জন্য ওই তরুণীকে নিয়ে তিনি সাটুরিয়া থানায় সেকেন্দারের কাছে যান। তবে টাকা দেওয়ার পরিবর্তে ডাকবাংলোতে নিয়ে তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রেখে তাঁর সঙ্গে যাওয়া তরুণীকে পাশের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। শুধু সেকেন্দার নন, এএসআই মাজহারুলও মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। এরপর বিষয়টি কাউকে জানালে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
ওই নারী বলেন, আটকে রাখার বিষয়টি জানার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম ডাকবাংলোতে যান। এ সময় এসআই সেকেন্দারকে তাঁর সঙ্গে দেনাপাওনা পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়ে চলে যান। ওসির নির্দেশে তাঁকে ১০ হাজার টাকা দিলেও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আটকে রাখা হয়।
ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ডাকবাংলোতে গিয়ে এসআই সেকেন্দারের সঙ্গে ওই নারীকে তর্কবিতর্ক করতে দেখি। এর কারণ জানতে চাইলে তাঁরা টাকাপয়সা লেনদেনের বিষয়টি জানান। এরপর সেকেন্দারকে পাওনা টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সেখান থেকে চলে যাই।’ সে সময় ধর্ষণের বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়নি বলে তিনি জানান।
এসআই সেকেন্দার হোসেন বলেন, ওই নারী তাঁর কাছে এক লাখ টাকা পেতেন। তা প্রায় পরিশোধ করা হয়েছে। ওই নারী টাকার দাবিতে তাঁর কাছে এসেছিলেন। তাঁকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণ ও আটকে রাখার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এএসআই মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
ডাকবাংলোর তত্ত্বাবধায়ক জসিম উদ্দিন বলেন, এসআই সেকেন্দার এক বছরের বেশি সময় ধরে ডাকবাংলোর নিচের একটি কক্ষে থাকেন। গত বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ওই কক্ষে কোনো নারী ছিলেন কি না, তা তাঁর জানা নেই। তিনি ওই তিন দিন ছুটিতে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘দারোগার কক্ষে কে যায়, কে আসে, আমি কখনো এসব খোঁজ রাখি না।’
এসপি রিফাত রহমান বলেন, এই ঘটনায় এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির একমাত্র সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হাফিজুর রহমান। তাঁকে এক কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।