দুই হাত বিচ্ছিন্ন করে কিশোরের লাশ পুঁতে রাখা হয় পদ্মার চরে

বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে কারও কল পেয়ে সুজন বাড়ি থেকে বের হয়। এর পর থেকে তার খোঁজ ছিল না। সোমবার লাশ উদ্ধারের পর পরিবার শনাক্ত করে এটি সুজনের লাশ।

রাজবাড়ীতে পদ্মার চরে এক কিশোরের লাশ পুঁতে রাখে দুর্বৃত্তরা
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার কাওয়ালজানি এলাকার পদ্মার চরে পুঁতে রাখা এক কিশোরের দুই হাত বিচ্ছিন্ন অর্ধগলিত লাশ গতকাল সোমবার উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে সকালে এলাকার লোকজন লাশটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পুলিশকে জানায়। লাশটি গত বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে ডেকে নেওয়ার পর থেকে নিখোঁজ সুজন খান ওরফে মিরাজের (১৬)।

সুজনের পরিবারের দাবি, গত বৃহস্পতিবার সুজনকে মুঠোফোনে ডেকে নেওয়া হয়। এর পর থেকে তার খোঁজ নেই। খবর পেয়ে তাঁরা গিয়ে লাশটি সুজনের বলে শনাক্ত করেন। তবে এর আগে সন্ধ্যার দিকে পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ীতে পাঠায়।

সুজন খান ওরফে মিরাজ।
সংগৃহীত

সুজন গোয়ালন্দ উপজেলার উত্তর চর পাচুরিয়া গ্রামের সিরাজ খার ছেলে। সে দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র।

পুলিশ ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টার দিকে এলাকার কয়েকজন পদ্মার চরে পুঁতে রাখা একটি লাশ দেখতে পান। তাঁরা বিষয়টি দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলামকে জানান। তিনি বিষয়টি গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ দুপুরে লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় কিশোরের দুই হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ ছাড়া শরীরে ধারালো অস্ত্রের ৩-৪টি আঘাতের চিহ্ন আছে।

সুজনের আত্মীয় ও দেবগ্রাম ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাড়িতে খাবার খাচ্ছিল সুজন। মুঠোফোনে কারও কল পেয়ে সে বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় বাড়িতে মা-বাবা ছিলেন না। ছোট বোনকে বলেছিল জরুরি কাজ আছে। এর পর থেকে তার আর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন শুক্রবার সুজনের বাবা সিরাজ খা গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। লাশ উদ্ধারের পর তাঁরা সুজনের কপালে থাকা কাটা দাগ, পরনের প্যান্টসহ অন্যান্য চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হয়েছেন, লাশটি সুজনের। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে সবার ছোট।

সুজনের বড় ভাই সেলিম খার ভাষ্য, ‘গত বছর নদী ভাঙনের কারণে দেবগ্রাম থেকে বাড়ি ভেঙে উত্তর চর পাচুরিয়ায় বাড়ি করি। আমাদের কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। কারা সুজনকে ডেকে নিয়ে এভাবে হত্যা করল, বুঝতে পারছি না।’ তিনি ভাই হত্যার বিচার দাবি করেন।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-তায়াবীর বলেন, দুই হাত বিচ্ছিন্ন কিশোরের পরিচয় প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। তখন তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। তবে পরিবার লাশটি শনাক্ত করলে গতকাল রাতেই কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বের করতে পুলিশ কাজ করছে।