ধর্ষণ মামলার আসামির সঙ্গে চট্টগ্রাম আদালতে বাল্যবিবাহ

বিশেষ বিধান রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম আদালতে গত বুধবার একটি বাল্যবিবাহ হয়েছে। বর ধর্ষণ মামলার আসামি। আর কনে মামলার বাদী। দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে কাজী ডেকে এনে আদালতে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। মেয়েটির বয়স ১৮ বছরের কম।
বিয়ের পর জামিন দেওয়া হয়েছে আসামিকে (বর)। গতকাল বৃহস্পতিবার আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
অবশ্য জামিনে মুক্তি দেওয়া হলেও আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি বলে জানান চট্টগ্রাম শিশু আদালতের সরকারি কৌঁসুলি এম এ ফয়েজ। তিনি বলেন, আদালত বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণ করবেন। মামলা চলবে কি না, সে বিষয়ে পরে আদেশ দিতে পারেন আদালত।
বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে বিশেষ প্রেক্ষাপটে কম বয়সে ছেলেমেয়েদের বিয়ের বিধান রেখে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল, ২০১৭ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে পাস হয়েছে। সদ্য পাস হওয়া এই আইনে বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের ২১ ও মেয়েদের ১৮ বছর বহাল থাকলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ কম বয়সেও বিয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানার বেলতলীঘোনা এলাকার এক রিকশাচালকের মেয়ের (কিশোরী) সঙ্গে প্রতিবেশী যুবকের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একসময় মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এরপর ওই যুবককে বিয়ের প্রস্তাব দেয় মেয়েটি। কিন্তু যুবকটি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৫ মে নগরের আকবর শাহ থানায় ওই যুবকের বিরুদ্ধে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ এনে মামলা করে মেয়েটি। পরে পুলিশ যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। কিশোরীর সন্তানের বয়স এখন ১ বছর ৪ মাস।
সরকারি কৌঁসুলি এম এ ফয়েজ প্রথম আলোকে বলেন, দুই পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে তিন লাখ টাকার দেনমোহরে আদালতে কাজি ডেকে এনে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। ওই তরুণীর কোনো আপত্তি না থাকায় এবং বিয়েতে রাজি হওয়ায় আসামিকে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন আদালত।
সরকারি কৌঁসুলি বলেন, আদালতে মেয়েটি কোনো জন্মসনদ দেয়নি। ঘটনার সময় মামলার আরজিতে মেয়েটি তার বয়স ১৪ বছর ৮ মাস উল্লেখ করে। তিনি বলেন, গত ৮ জানুয়ারি সমঝোতা প্রস্তাব দিয়ে আদালতে হলফনামা জমা দেয় মেয়েটি। আর জামিনের আবেদন করেন আসামি। আদালত বুধবার ভুক্তভোগী ও আসামির উপস্থিতি এবং উভয় পরিবারের সদস্যদের মতামত নেন। তাঁরা বিয়ের পক্ষে মত দেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আইন হচ্ছে সামাজিক শান্তির জন্য। বাচ্চা হয়ে যাওয়ায়, আসামি নিজের ভুল বুঝতে পারায় সামাজিক বাস্তবতার কারণে হয়তো আদালত বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন।