নতুন বই দিতে ২০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন বই দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার থেকে সারা দেশে বই বিতরণ শুরু হলেও এ বিদ্যালয়ে ৫ জানুয়ারি বই দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের নাম ৮৯ নম্বর তাঁতখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের তাঁতখানা এলাকায় অবস্থিত। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১২০০। তবে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রইসউদ্দীন টাকা নেওয়ার দায় চাপাচ্ছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ওপর।
ওই বিদ্যালয়ের চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, সারা দেশে সরকার গত শুক্রবার বই উৎসব উদ্যাপন করে। কিন্তু এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি ৫ জানুয়ারি বই বিতরণ করা হবে বলে ঘোষণা দেয়। নতুন বই নিতে হলে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতি শিক্ষার্থীকে ৫ জানুয়ারির মধ্যে ২০০ টাকা করে দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ২০০ টাকা করে শিক্ষকদের কাছে জমাও দিয়েছেন। এমন সিদ্ধান্তে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা এই অনিয়মের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
গতকাল শনিবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে নতুন বইয়ের জন্য ২০০ টাকা করে
নেওয়া হচ্ছে। এ সময় ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, নতুন বই পেতে তারা বিদ্যালয়ের শিখা আপার কাছে ২০০ টাকা হারে চাঁদা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রইসউদ্দীন বলেন, ‘শিখা আমাদের লোক না, তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নিয়োগ করা শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা আমি নিচ্ছি না, কমিটি নিচ্ছে। আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য গাজী সেলিম আহমেদ এই টাকা নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে আমি অসহায়, আমার কিছু বলার নাই। পরিচালনা কমিটির সভাপতি এম এ বারী, সহসভাপতি এস এম মাহবুবে আলম এই টাকার ব্যাপারে বলতে পারবেন। আমরা যাঁরা সরকারি চাকরি করি, তাঁরা কেউ এই টাকা নিচ্ছি না, এটা ওনারা ওনাদের দায়িত্বে নিচ্ছেন। ওনারা স্থানীয় লোক। এ ব্যাপারে আমি কী করতে পারি?’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বারী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য গাজী সেলিম এবং এস এম মাহবুব আলম, তাঁরা দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়ে এ টাকা নিচ্ছেন।’
টাকা আদায় প্রসঙ্গে এস এম মাহবুব আলম ও গাজী সেলিম বলেন, ‘এ বিদ্যালয়ে তিনজন বেসরকারি শিক্ষক, একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং একজন আয়া রয়েছেন। এই পাঁচজনের বেতন সরকার আমাদের দেয় না। তাঁদের বেতনের জন্য তহবিল (ফান্ড) গঠনের লক্ষ্যে গত অভিভাবক দিবসে আমরা পরিচালনা পরিষদ ও অভিভাবকেরা মিলে নতুন বই দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কারণে ওই টাকা নেওয়া হচ্ছে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা সুলতানা চৌধুরী বলেন, সরকারের নির্দেশনা রয়েছে, বিনা মূল্যে দেওয়া সরকারি বই কোনো কিছুর বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের দেওয়া যাবে না। বই দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।