নামাজের মিনিট ১৫ আগে আঁচ পান ইমাম

মাওলানা সোয়াইব আবদুর রউফ
মাওলানা সোয়াইব আবদুর রউফ

‘সকাল নয়টা থেকে নয়টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত আমার বয়ান (বক্তৃতা) করার কথা। বয়ান শুরু করলাম আরও ১০ মিনিট আগে। কিন্তু নয়টা ৪৬ বেজে গেল, হুজুর (মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ) আসেননি, আমাকেও কেউ বয়ান থামাতে বলছে না। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমাকে ইশারা দেওয়া হলো, বয়ান চালিয়ে যান। এ সময় প্রথম সন্দেহ হয়, কোথাও কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।’
সোয়াইব আবদুর রউফ এভাবেই ১০টা পর্যন্ত বয়ান চালিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমি দেখছিলাম মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। মনে হলো তারা নামাজের জন্য প্রস্তুত। এমন অবস্থায় আমি বক্তৃতা শেষ করে পেছনের দিকটায় গেলাম। সেখানে ডিসি (জেলা প্রশাসক) সাহেবের সঙ্গে অন্যদের কথোপকথন থেকে বুঝলাম ঝামেলা হয়েছে। তখন সিদ্ধান্ত হলো যে যথাসময়েই নামাজ হবে।’
গতকাল শুক্রবার ইমাম হাফেজ মাওলানা সোয়াইব আবদুর রউফ প্রথম আলোর কাছে এভাবেই শোলাকিয়া মাঠে ঈদের দিনের ঘটনার বর্ণনা করছিলেন। তিনি শোলাকিয়া মাঠের নিয়োগপ্রাপ্ত দ্বিতীয় (বিকল্প) ইমাম। শোলাকিয়ার মূল ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের অনুপস্থিতে এ বছর ১৮৯তম ঈদ জামাতের ইমামতি করেন কিশোরগঞ্জের বড়বাজার এলাকার শাহাবুদ্দীন মসজিদের ইমাম সোয়াইব আবদুর রউফ। 

যখন সোয়াইব আবদুর রউফ বয়ান করছিলেন, তখন শোলাকিয়া মাঠের আধা কিলোমিটারের মধ্যে আজিমউদ্দীন হাইস্কুলের কাছে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের গোলাগুলি চলছিল। মাঠে অনেকেই বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন। অনেকে পরিবার-পরিজনের ফোনে বিষয়টি জানতে পারেন। কিন্তু আবদুর রউফ ছিলেন অন্ধকারে। নামাজ শুরু হওয়ার মিনিট ১৫ আগে কোনো একটা সমস্যার আঁচ পান তিনি।
ঈদের দিন জঙ্গিদের ওই হামলায় নিহত হন পুলিশের দুজন সদস্য। পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে আবির রহমান নামের এক জঙ্গি ও নিজের ঘরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামের এক নারী নিহত হন।
শোলাকিয়া মাঠের কাছে বিস্ফোরণের পর ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ মাঠে উপস্থিত হতে পারেননি। তিনি শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে হেলিকপ্টার থেকে নামেন। সেখান থেকে মাঠে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তাঁকে সার্কিট হাউসে যেতে হয়। এর মধ্যে ঈদের নামাজের সময় হয়ে যাওয়ায় বিকল্প ইমাম সোয়াইব আবদুর রউফ নামাজ পড়ান।
সোয়াইব আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, শোলাকিয়ায় সাধারণত ঈদের জামাত পড়ান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। আর এর আগে আবদুর রউফ ৪০ মিনিট বয়ান করেন। এবার বয়ানের মাঝখানেই তাঁর ভাই গণমাধ্যমে খবর পেয়ে একবার মুঠোফোনে বলছিলেন, শোলাকিয়ায় গন্ডগোল হচ্ছে। কিন্তু তিনি গা করেননি। তিনি দেখেন, মাঠের পরিস্থিতি একদম স্বাভাবিক। তিনি নয়টার আগে বক্তৃতা শুরু করেন, কিন্তু যখন দেখলেন নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাওয়ার পরও কেউ তাঁকে বক্তৃতা থামাতে বলছেন না, কিংবা ইমাম আসছেন না, তখন তাঁর প্রথম সন্দেহ হয়। তিনি পেছনের দিকে তাকালে সেখান থেকে বক্তৃতা চালিয়ে যেতে ইশারা করা হয়।
সোয়াইব আবদুর রউফ বলেন, ঘটনার তাৎপর্য বুঝতে পেরে ও অন্যদের পরামর্শ অনুসারে নামাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হয়। এরপর খুতবা ও দোয়াও একইভাবে সংক্ষিপ্ত করে শেষ করা হয়। কেননা, এই ঘটনার কোনো আঁচ যদি মাঠের কোনো অংশে পড়ত, তবে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।
সোয়াইব আবদুর রউফ বলেন, পবিত্র কোরআনে সুরা মায়েদায় আল্লাহ তাআলা বলেছেন, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা মানে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করা। সুতরাং, ধর্মের নাম নিয়ে কেউ এই ধরনের হত্যাকাণ্ড চালালে তা কোনোভাবেই ধর্মসিদ্ধ নয়। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।