নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে আর্থিক অনিয়ম?

ক্লাবের নিযুক্ত নিরীক্ষাকারী সংস্থা এস এইচ খান অ্যান্ড কোংয়ের ওই প্রতিবেদন গত ২৯ ডিসেম্বর ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় উত্থাপন করা হয়। তখন ক্লাবের সাধারণ সদস্যরা আর্থিক অনিয়ম তদন্তের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়ম তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন কাসেম জামাল, আব্দুর রাশেদ, আহসানুল করীম চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন, আবদুল মজিদ খন্দকার, সামসুল হক, খাজা আজিজুল হক। তাঁরা সবাই ক্লাবের সদস্য। এক বছরে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনসহ ২০টি খাতে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্লাবের ২০১৬ সালের কমিটির সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শংকর কুমার রায় ৫ জানুয়ারি একটি যৌথ প্রত্যয়নপত্র নিরীক্ষাকারী সংস্থাকে দেন। প্রত্যয়নপত্রে তাঁরা লিখেছেন, ‘অসমন্বিত তহবিল বাবদ ৪২ লাখ ২৩ হাজার ২৯৬ টাকা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অগ্রিম প্রদান করা হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করা হবে। দুটি নতুন সদস্য পদ ট্রান্সফার ফি ও অনুদানের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য পে-স্লিপের খরচ বাস্তবতার আলোকে প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন কারণে উক্ত খরচের অনুকূলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে উপরোক্ত অসংগতির কারণের দায় আমাদের ওপর বর্তাবে।’

১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপিয়ান ক্লাব পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেড হয়। বর্তমানে সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ২০০। প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্লাবের কমিটি গঠনের ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে রাজনৈতিক প্রভাবে নির্বাচন ছাড়াই ক্লাবের বেশির ভাগ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাংসদ সেলিম ওসমান পরপর দুবার বিনা ভোটে ক্লাবের সভাপতি হন। বর্তমান সভাপতি তানভীর আহমেদ সাংসদ শামীম ওসমানের শ্যালক। তিনিও বিনা ভোটে সভাপতি হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লাবের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য বলেন, ভোটাভুটি ছাড়া কমিটি গঠন করায় এ ধরনের আর্থিক অনিয়ম, জালিয়াতি, দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। ৫৬ লাখ টাকা ক্লাবের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে সহসভাপতির ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করা হয়েছে। প্রভাবশালী রাজনীতিকেরা ক্লাবে বসে তাঁদের সহযোগী, ক্যাডারদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেন। সদস্য ছাড়া বিনা অনুমতিতে ক্লাবে অন্য কারও প্রবেশ নিষেধ থাকলেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা ক্লাবে অবস্থানকালে তাঁদের ক্যাডাররা অবাধে যাতায়াত করেন।

বিগত কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শংকর কুমার রায় বলেন, ক্লাবের বিষয় বাইরে না আনাই ভালো। ক্লাবের সচিব হাসান শাহরিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।