নাসিরনগরে তাণ্ডব: ৭ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি ৪ বছরেও

হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় দায়ের আট মামলার মধ্যে একটির অভিযোগপত্র হয়েছে। ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ ওই পোস্টের রহস্যও উদ্ধার হয়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৫টি মন্দির ও শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার চার বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার। এসব ঘটনায় আটটি মামলা হয়। ঘটনার ১৩ মাস পর একটি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও বাকি সাতটি মামলার অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ। ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ ওই পোস্টের রহস্যও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের বাসিন্দা রসরাজ দাসের ফেসবুক পোস্টের জেরে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর উপজেলা সদরে ১৫টি মন্দির ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থতার দায়ে প্রথমে নাসিরনগর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদরের দত্তপাড়ার দত্তবাড়ির পারিবারিক মন্দিরে হামলার ঘটনায় কাজল জ্যোতি দত্ত বাদী হয়ে একটি, কাশীপাড়ার গৌরমন্দিরে হামলার ঘটনায় নির্মল চৌধুরী বাদী হয়ে একটি, চেঙ্গাপাড়ার ছোট্ট লাল দাসের বাড়িতে আগুনের ঘটনায় একটি, পশ্চিমপাড়া ও বণিকপাড়া ‍দুটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এসআই সাধন কান্তি দাস চৌধুরী দুটি, বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব একটি, রসরাজ দাসের বাড়িতে হামলার ঘটনায় তাঁর ভাই দয়াময় দাস বাদী হয়ে একটিসহ মোট সাতটি মামলা হয়। তা ছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ এনে রসরাজের নামে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ধারায় মামলা করেন এসআই কাউসার হুসাইন।

এই আট মামলায় প্রায় তিন হাজার লোককে আসামি করা হয়। এসব মামলায় অন্তত ১৫-১৬ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ কাশীপাড়ার গৌরমন্দিরে হামলার ঘটনায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে অভিযোগপত্র দিয়েছে। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে। রসরাজের মামলাটি তদন্ত করছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। রসরাজ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জামিনে মুক্তি পান।

রসরাজ দাসের মামলার আইনজীবী নাসির মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ২০ অক্টোবর রসরাজ দাসের মামলার তারিখ ছিল। এ মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রসরাজের ফেসবুক, মুঠোফোন ও মেমোরি কার্ডসংক্রান্ত ফরেনসিক প্রতিবেদন দিয়েছে। আপত্তিকর ওই পোস্ট রসরাজের ফেসবুক, মুঠোফোন ও মেমোরি কার্ড থেকে দেওয়ার কোনো আলামত পিবিআই পায়নি।

দত্তবাড়ি ও নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে রসরাজের বাড়িতে হামলার ঘটনার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেন বলেন, দত্তবাড়ির মামলায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি ও রসরাজের বাড়িতে হামলার ঘটনায় হওয়া মামলায় ১০০ থেকে ১৫০ অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন। তাই সময় লাগছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, এটি (ফেসবুক পোস্ট) একটি সাইবার অপরাধ। এখানে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এবং ফরেনসিক প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য–প্রমাণের জন্য পুলিশ কাজ করছে। দ্রুতই এসব মামলার প্রতিবেদন দেওয়া হবে।