নিজ থেকে সরে যেতে চাচ্ছেন দুই প্রকল্প পরিচালক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অর্থায়নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুটি প্রকল্প থেকে দুই পরিচালক সরে যেতে চাচ্ছেন। এ জন্য তাঁরা গত মাসের শেষ সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।

করোনাকালে মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিইর মতো জরুরি স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে দুই প্রকল্প পরিচালক কেন সরে যেতে চাচ্ছেন, এ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনেকে মনে করছেন, তাঁরা অস্বস্তি থেকে এই পদ ছাড়তে চাচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনে করছেন, তাঁরা ‘ভয়’ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছেন।

কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনসেবা নিশ্চিত করতে গ্রহণ করা প্রকল্প দুটির মধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের নাম কোভিড ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পে (ইআরপিপি) এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রকল্পের নাম কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যাসিসটেন্স। সাড়ে আটশ কোটি করে প্রকল্প দুটিতে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মোট ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পে শুরুতেই ৩২ কোটি কেনাকাটার কাজ দেওয়া নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর এই প্রকল্পের পরিচালক ইকবাল কবীরকে গত ২২ জুন সরিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। এরপর গত ১৩ জুলাই এই প্রকল্পের পরিচালক করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী শামীম হোসেনকে।

দুই মাসের মাথায় কাজী শামীম হোসেন ইআরপিপি প্রকল্পের পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে আবেদন করেন। তাতে বলেন, তাঁর পক্ষে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন শারীরিক ও মানসিকভাবে একেবারেই সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি অনভিজ্ঞতা এবং ডায়াবেটিক ও হাইপারটেনশনসহ পাঁচটি দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন বলে উল্লেখ করেন। তাঁকে আগের কর্মস্থলে পদায়নের জন্য আবেদন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই প্রকল্পের শুরু থেকেই কেনাকাটা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয় তদন্ত করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) অনুসন্ধান করছে। একের পর একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এমন অবস্থায় নতুন দায়িত্বে এসে ভয় ও অস্বস্তিতে পড়েছেন এই কর্মকর্তা।

অবশ্য কাজী শামীম হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অসুস্থ বলেই অব্যাহতি চেয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের দায়িত্বে আসার পর তিনি প্রকল্পের কোনো কাজ করেননি। কেবল ‘রুটিন’ কাজ করেছেন।

অসুস্থতার কারণে প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না; তাহলে অধিদপ্তরের উপপরিচালকের দায়িত্ব কীভাবে পালন করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী শামীম হোসেন বলেন, ‘আপনি কী আমাকে জেরা করছেন? এসব আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’

এডিবির অর্থায়নে চলা প্রকল্পের পরিচালক মো: শামছুর রহমান। তিনি গত ১৫ জুলাই এ পদে যোগ দেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে অব্যাহতি চেয়ে দেওয়া চিঠিতে বলেছেন, তার প্রায়ই ‘মাথা ঘোরায়’। এ ছাড়া তিনি আগামী বছর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাবেন। এই মুহূর্তে তাঁর পক্ষে গুরুদায়িত্ব পালন করা সম্ভব না।

তবে শামছুর রহমানের চাকরি সংক্রান্ত নথি অনুযায়ী, তাঁর অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা ২০২১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর। অর্থাৎ তিনি আরও ১৫ মাস চাকরি করবেন।

অব্যাহতি চাওয়ার কারণ সম্পর্কে শামছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শারীরিক সমস্যা আছে বলেই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।’ তাঁর প্রকল্পের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন তো প্রয়োজনীয়তা কমে আসছে। কেনাকাটা কম।’

অবশ্য এর আগে এডিবির অর্থায়নের এই প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আমিনুল হাসান। তাঁকে রিজেন্ট হাসপাতাল কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুই দফায় ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়। তাঁকে দুদক ওই কেলেঙ্কারির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, করোনা মোকাবিলায় নেওয়া এই দুটি প্রকল্পে মোট চার হাজার ২৫০ কোটি টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এ ছাড়া টিকাসহ অন্যান্য মালামাল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে প্রকল্পের কাজে তেমন অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে তারা অসন্তোষও প্রকাশ করছে।

এই অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প দুটির পরিচালক কেন অব্যাহতি চাচ্ছেন? জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ভয়েই তারা অব্যাহতি চাচ্ছেন। তারা নতুন যোগ দিয়েছেন, এরই মধ্যে প্রকল্পগুলো নিয়ে এত কথাবার্তা, জিজ্ঞাসাবাদ; হয়তো এসব কারণে তাঁরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাঁরা যদি না থাকতে চায় তাহলে অন্য যারা এই পদের যোগ্য, তাদের পদায়ন করা হবে।’