নির্যাতনকারীদের হাত কামড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন নোয়াখালীর নারী

প্রতীকী ছবি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে নির্যাতনের আগে সেই রাতে তাঁর বসতঘর ঘেরাও করেন আসামিরা। এরপর ঘরে ঢুকে তাঁরা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে ও তাঁর স্বামীকে আটক করে মারধর করেন। এ সময় নিজেকে রক্ষার চেষ্টায় ওই নারী দুজনের হাত কামড়ে দেন।

ওই ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার আবদুর রহিম গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছেন। রহিমসহ দুজন গতকাল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র এ কথা জানিয়েছে।

এদিকে ঢাকার আশুলিয়ায় কিশোরীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায়ও দুই আসামি গতকাল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

নোয়াখালীতে মামলার এজাহারভুক্ত ২ নম্বর আসামি আবদুর রহিম নোয়াখালীর ৩ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাশফিকুল হকের আদালতে এবং ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগ ১ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোয়েব উদ্দিন খানের আদালতে জবানবন্দি দেন।

আদালতসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আসামি আবদুর রহিম স্বীকার করেছেন, তিনি ওই নারীর গায়ে হাত দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে দুটি লাথিও মেরেছেন।

জানতে চাইলে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁর দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন, ঘটনার কয়েক দিন পর ওই নারী তাঁর বাড়িতে এসে নির্যাতনের ঘটনাটি জানান। ওই নারী তখন তাঁকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম বলেন। তিনি নারীর অভিযোগ শোনার পর বিষয়টি নিয়ে আর কারও সঙ্গে কথা বলেননি।

ওসি মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ চৌধুরী জানান, ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ভিডিও চিত্র ভাইরালের মামলায় দেলোয়ার বাহিনীর অন্যতম সহযোগী আবুল কালামের তিন দিন করে ছয় দিন এবং ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া অপর মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ ছাড়া নারীকে নির্যাতনের মামলায় গত বুধবার রাতে গ্রেপ্তার মাঈনুদ্দিন সাহেদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

গতকাল নোয়াখালীর ৩ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাশফিকুল হক রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

এদিকে ওই নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল বিকেলে অস্ত্র মামলায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাঁকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মোহসীনের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

৪ অক্টোবর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল তল্লাশিচৌকিতে দেলোয়ারকে দুটি গুলি, একটি পিস্তলসহ আটক করে র‌্যাব-১১। পরে রাতে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে তাঁর মাছের খামারে অভিযান চালিয়ে সাতটি ককটেল ও দুটি গুলি উদ্ধার করা হয়।

আশুলিয়ার ঘটনায় দুজনের স্বীকারোক্তি

ঢাকার আশুলিয়ায় এক কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার সাহরুফ ও জাকির হোসেন গতকাল ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এদিকে এই মামলায় গ্রেপ্তার অপর এক আসামি নিজেকে কিশোর দাবি করায় ১১ অক্টোবর কিশোর আদালতে তাঁর রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।

গত ৩০ আগস্ট দুই কিশোরী চাচা সম্পর্কের দুই তরুণকে নিয়ে আশুলিয়ার গুলিয়ারচক এলাকায় বেড়াতে যান। সেদিন ১০-১২ জনের একটি কিশোর গ্যাং তাদের আটক করে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন দুই তরুণকে আটকে মারধর করেন। অন্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুই কিশোরীকে পৃথক স্থানে নিয়ে যান। এর দুই ঘণ্টা পর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের ছেড়ে দেন। কিশোরীদের চাচা সম্পর্কের এক তরুণ জানান, চার দিন আগে একটি ভিডিও চিত্র দেখে তাঁরা জানতে পারেন, এক কিশোরী সেদিন ধর্ষণের শিকার হয়েছিল।

এই ঘটনায় ওই কিশোরীর বড় বোন গত বুধবার রাতে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। এতে সাহরুফ (১৮), সাধুমার্কেট আল-আমিন (১৯), জাকির হোসেন (১৮), রেদোয়ান (২০), বাদশা (১৮), জিহাদ (২০), আল-আমিন (১৯), বাটা আল-আমিন (১৯), শাকিলসহ (১৯) ১০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে একজন নিজেকে কিশোর দাবি করেছেন। মামলায় তাঁর বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ বছর। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়। এর আগে আসামিদের মধ্য থেকে সাহরুফ, জাকির হোসেনসহ তিনজনকে পুলিশ গত মঙ্গল ও বুধবার গ্রেপ্তার করে।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন।

সিলেটে ঘটনায় সাইফুর রিমান্ডে

সিলেটের এমসি (মুরারিচাঁদ) কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর রহমান (২৮) অস্ত্র মামলারও আসামি। ধর্ষণ মামলার পাশাপাশি অস্ত্র মামলার তদন্তের প্রথম ধাপে গতকাল সাইফুরকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

শাহপরান থানার পুলিশ গতকাল সাইফুরকে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (এমএম-২) হাজির করে। আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) খোকন কুমার দত্ত প্রথম আলোকে জানান, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের মামলার প্রধান আসামি সাইফুর অস্ত্র মামলার একমাত্র আসামি। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক তরুণী (১৯)। পুলিশ জানায়, ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার সাইফুর কলেজের ছাত্রাবাসের ৫ নম্বর ব্লকের ১০৫ নম্বর কক্ষ দখল করে ব্যবহার করতেন। ধর্ষণের ঘটনার পর ভোররাতে ওই কক্ষে অভিযান চালিয়ে একটি পাইপগান, চারটি রামদা ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শাহপরান থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করেন। মামলায় সাইফুরকে একমাত্র আসামি করা হয়।

এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, অস্ত্র মামলার তদন্তে সাইফুরের সঙ্গে ধর্ষণ মামলার এজাহারে থাকা ৩ নম্বর আসামি শাহ মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে রনির (২৫) সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তাই অস্ত্র মামলায় শাহ মাহবুবুরকে ‘সন্দিগ্ধ’ আসামি করা হচ্ছে।