পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নে পানচাষিরা পানগাছের বিভিন্ন রোগ দমনসহ গাছ মোটাতাজাকরণ ও পাতা বড় করার জন্য বরজে দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান মহসীন আলী খান বলেন, নতুন পানের বরজ করার সময় দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু পান খাওয়ার উপযোগী বরজে কোনোভাবেই এ ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না। তিনি বলেন, দানাদার কীটনাশক গাছ শোষণ করে নেয়। মিশে যায় পুরো শরীরে। অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন বিষাক্ত অবস্থায় থাকে পান। এই পান দীর্ঘদিন খেলে মানুষের শরীরে মারাত্মক রোগ দেখা দেবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউনিয়নের উত্তর ধরান্দী গ্রামের চাষি জালাল হাওলাদার তাঁর পানের বরজের পাশে বসে একটি পাত্রে কয়েক ধরনের দানাদার কীটনাশক মেশাচ্ছেন। এরপর এই কীটনাশক খাওয়ার উপযোগী পানের বরজে ছিটিয়ে দিচ্ছেন। বরজে কী দিচ্ছেন এবং কেন দিচ্ছেন, জানতে চাইলে জালাল বলেন, ফুরাডান, ব্রিফার কীটনাশক দিচ্ছেন বরজে। এতে গাছের গোড়ার মাটির কেঁচো দমনের পাশাপাশি গাছ মোটাতাজা এবং পানের পাতাও বড় হচ্ছে। এ কারণে তাঁরা এই কীটনাশক ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, পান চাষ লাভজনক হওয়ায় তাঁদের গ্রামে অনেকেই পান চাষে ঝুঁকছেন। তবে পান চাষে কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানেন না।
দক্ষিণ ধরান্দী গ্রামের চাষি আবুল হোসেন জানান, এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে তিনি পানের বরজ করেছেন। ভাইরাসবাহিত রোগ ও পোকা দমন এবং গাছের গোড়া পচা থেকে রক্ষায় তাঁরা বরজে ফুরাডান (দানাদার কীটনাশক) দিচ্ছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের কীটনাশক কেন ব্যবহার করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধানখেতেও এ ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করছি আমরা। ভালো ফসলও পাচ্ছি। তাই পান চাষেও ব্যবহার করছি।’
ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আউয়াল উল্লাহ বলেন, পানের বরজে দানাদার কীটনাশক (ফুরাডান, ব্রিফার, বাসুডিন, কুরাটার, রাজদান-জাতীয়) ব্যবহারের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এসব কীটনাশক ধান চাষাবাদসহ কিছু কিছু ফসলের জন্য উপযোগী। তবে পান চাষে এই কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, দানাদার কীটনাশক প্রস্তুতকারী কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ধরনের কীটনাশক বিক্রিতে উদ্বুদ্ধ করছেন। ডিলাররাও অধিক লাভের আশায় চাষিদের কাছে বিষাক্ত কীটনাশক বিক্রি করছেন।
দক্ষিণ ধরান্দী বাজারের সারের খুচরা বিক্রেতা নুরুল ইসলাম বলেন, আসলে চাষিরা নিজের ইচ্ছাতেই দানাদার কীটনাশক কিনছেন। তবে সেই কীটনাশক কোথায়, কীভাবে ব্যবহার করছেন—এ সম্পর্কে তাঁদের কাছে পরামর্শ চান না পানচাষিরা।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক অশোক কুমার শর্মা জানান, এ বছর জেলায় ৬৪৮ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। চাষিরা কেঁচো দমনে কীটনাশক ব্যবহারের কথা বললেও কেঁচো পানগাছের কোনো ক্ষতি করে না। বরং মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। বেশির ভাগ চাষি বংশপরম্পরায় পুরোনো পদ্ধতিতে পানের চাষাবাদ করছেন। তবে কৃষকদের কীটনাশক ও বালাইনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে অন্তত পান চাষে যাতে দানাদার কীটনাশক ব্যবহার না করা হয় এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।