পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাবুলের শ্বশুরের নারাজি আবেদন

বাবুল আক্তার ও মাহমুদা খানম
ফাইল ছবি

সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যার ঘটনায় তাঁর (বাবুল) শ্বশুরের করা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হালিমের আদালতে আবেদনটি করেন মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন।

বাদীর আইনজীবী আহসানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পিবিআই বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করেনি। বাবুলের দুই সন্তানের একজন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তার সঙ্গে কথা না বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এসব কারণসহ নানা ত্রুটি তুলে ধরে পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তে পাঠানোর জন্য আদালতে নারাজি আবেদন দেওয়া হয়েছে। আদালত মামলার সিডিসহ (নথি) শুনানির জন্য আগামী ৬ মার্চ তারিখ ধার্য করেছেন।

গত ২৫ জানুয়ারি পিবিআই মোশাররফের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এতে মামলায় গ্রেপ্তার আসামি বাবুলসহ অন্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

একই ঘটনায় আরেকটি মামলা (বাবুলের করা) থাকায় সেটি পিবিআইকে তদন্ত করতে বলা হয়। একই ঘটনায় দুটি মামলা হওয়ায় একটির (বাবুলের করা) তদন্ত হবে।

মাহমুদা হত্যার ঘটনায় প্রথম মামলাটি করেন বাবুল। দ্বিতীয় মামলাটি করেন তাঁর শ্বশুর ও মাহমুদার বাবা মোশাররফ। দুটি মামলাই তদন্ত করে পিবিআই।

মাহমুদা হত্যার পরদিন ২০১৬ সালের ৬ জুন তাঁর স্বামী বাবুল বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১২ মে এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

একই দিন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়।

বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ অক্টোবর আদালতে নারাজি আবেদন করেন তাঁর (বাবুল) আইনজীবী। আবেদনে বলা হয়, বাবুলকে আসামি করতে বানোয়াট চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। অথচ এই মামলায় পুলিশ ১৬১ ধারায় ৫১ জনের বেশি সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়েছে। সেখানে একজনও বাবুলের সম্পৃক্ততার কথা বলেননি। দুই সাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে বাবুলকে আসামি করা হয়েছে। কাদের বাঁচানোর জন্য এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন, সেটা দেখতে হবে। বাবুল মহলবিশেষের ষড়যন্ত্রের শিকার।

গত বছরের ৩ নভেম্বর আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

আদেশে বিচারক বলেন, এ মামলায় (বাবুলের করা) একটি সফল তদন্ত হয়েছে, যার মাধ্যমে খুনের মোটিভ ও আসামি শনাক্ত হয়েছে। তদন্তে দুজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, দুই সাক্ষীর ১৬৪ ধারার জবানবন্দি, সিসিটিভি ফুটেজ, কার্তুজসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ হয়েছে। একটি সফল তদন্তের পরিসমাপ্তি কেবল টেকনিক্যাল একটি তুচ্ছ কারণে ব্যর্থ করে দেওয়া উচিত হবে না; বরং এ মামলায় অধিকতর তদন্ত করে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। পরবর্তী আইনগত জটিলতা এড়ানো সম্ভব হবে।

ফৌজদারি কার্যবিধি আইন, ১৮৯৮-এর ১৫৪, ১৫৬ ও ১৯০ ধারার বিধান উল্লেখ করে আদেশে বিচারক বলেন, ‘এটিই আইনের সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি যে একটি আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে একটি মাত্র প্রাথমিক তথ্যবিবরণী দায়ের হওয়া উচিত। এজাহারকারী বা বাদী তদন্তে আসামি হিসেবে শনাক্ত হলেও তাতে মামলায় গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রভাব পড়বে না। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ২১ ধারার বিধান অনুযায়ী ওই এজাহার এজাহারকারীর বিরুদ্ধে বিচারের সময় প্রাসঙ্গিক হিসেবে বিবেচিত হবে।’

আদালতের এই আদেশের পর পিবিআই বাবুলের শ্বশুরের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন আজ দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মামলার বাদী না থাকলে মেয়ে হত্যার বিচার কী করে পাব? পিবিআই আমার করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় নারাজি আবেদন করেছি।’