বসতবাড়ির জায়গা দখলে নিতে ঘর নির্মাণ, গাছ কর্তন

বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় একটি পরিবারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পরিবারটির বসতবাড়ির জায়গা দখল করতে ঘর নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় প্রায় তিন লাখ টাকার গাছ কেটে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিংলাকাঠী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ওই গ্রামে গিয়ে এলাকাবাসী, পুলিশ এবং ভুক্তভোগী পরিবারটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নলচিড়া ইউনিয়নের ১৫৬ পিংলাকাঠী মৌজার এসএ ৬৪ নং খতিয়ানের ১১০৫ দাগের একর ৬৭ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন অতুল আচার্য্য, নগেন্দ্র নাথ আচার্য্য, জীবন কৃষ্ণ আচার্য্য নামের তিন ব্যক্তি। তাঁরা ভারতে চলে যাওয়ার ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি (ভিপি) হিসেবে নথিভুক্ত হয়। পিংলাকাঠী গ্রামের মোস্তফা মৃধার বাবা মৃত করম আলী মৃধা ডিক্রিবলে ওই জমিতে ১৯৬৮ সাল থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস করে আসছেন। করম আলীর মৃত্যুর পর ওই জমির মালিক হন তাঁর দুই ছেলে মোস্তফা ও স্বপন মৃধা।
মোস্তফা মৃধা জানান, ৫০ বছর ধরে তাঁরা ওই সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছেন। কিছুদিন ধরে একই গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান সর্দার জাল কাগজপত্র তৈরি করে ওই জমি নিজের বলে দাবি করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি জমিটি দখল করার পাঁয়তারা করে আসছিলেন। এ বিষয়ে গৌরনদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। মোস্তফা অভিযোগ করেন, গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে আবদুল মান্নান সর্দার, গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের দুর্যোগ ও ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক হীরা হাওলাদার, গৌরনদী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি কাজল হাওলাদার, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুকুল হাওলাদারসহ এক থেকে দেড় শ নেতা-কর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা চালান। বাড়ির লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। এরপর তাঁরা বসতভিটায় ঘর তৈরি করেন এবং বসতভিটার প্রায় তিন লাখ টাকার গাছ কেটে ফেলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পিংলাকাঠী গ্রামের সরোয়ার হোসেন, স্বপন মৃধা, রেনু বেগমসহ আরও কয়েকজন জানান, হামলাকারী নেতা-কর্মীরা ১২-১৫টি টেম্পো ও নছিমন নিয়ে ওই বাড়িতে উপস্থিত হন। বেলা ১১টা পর্যন্ত তাঁরা ওই বসতবাড়ির জমিতে থাকা কড়ই, জারাইলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ২০-২৫টি গাছ কেটে নছিমনে করে নিয়ে যান।
মোস্তফা মৃধা বলেন, ‘হামলা করার সঙ্গে সঙ্গে আমি থানার পুলিশকে খবর দিই। কিন্তু পুলিশের আসতে দেরি হয়। ততক্ষণে হামলাকারীরা গাছ কেটে নিয়ে যায়।’ গতকাল দুপুর ১২টায় ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে দোচালা একটি নতুন টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘর তোলার সরঞ্জাম ও কেটে নেওয়া গাছের গোড়ার অংশ পড়ে রয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুল মান্নান সর্দার বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আদালতের ডিক্রিবলে জমির বৈধ মালিক আমি এবং আমার জমিতে ঘর উত্তোলন করছি।’ বৈধ মালিক হলে গোপনে এবং ভাড়াটে লোকজন নিয়ে কেন ঘর তুললেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরা সবাই আমার বংশের লোক।’
গৌরনদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কেটে নেওয়া গাছের অংশবিশেষ জব্দ করেছে। মোস্তফা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ হাসান পাটোয়ারী বলেন, ওই সম্পত্তি ক তফসিলভুক্ত। আবদুল মান্নান সর্দার অবৈধভাবে ওই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।