বাবুল-মিতুর ছেলের সঙ্গে কথা বলবে পিবিআই

২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম
ছবিটি ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া

মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় তাঁর ছেলের সঙ্গে কথা বলবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ছেলে ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী। ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন আলোচিত তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম।

আজ শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, বাবুল আক্তার এখন পাঁচ দিনের রিমান্ডে পুলিশি হেফাজতে আছেন। রিমান্ড শেষে পিবিআই বাবুল-মিতু দম্পতির ছেলের সঙ্গে কথা বলবে। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার বক্তব্য এই মামলায় জরুরি। এর আগেও পুলিশ ছেলের সঙ্গে কথা বলেছে।

মিতুকে হত্যাকারীরা প্রথমে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দেয়

পুলিশ জানায়, এখন পর্যন্ত তদন্তে যা পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মিতুকে খুন করতে হত্যাকারীরা প্রথমে তাঁকে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা মারে। তিনি পড়ে যাওয়ার পর তারা তাঁকে কোপায় ও গুলি করে। তাঁকে যখন কোপানো হচ্ছিল তখন তাঁর সাত বছরের ছেলে মায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করে। এ সময় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা তাকে ধরে রেখেছিল। ২০১৬ সালের ৫ জুন মিতু হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে যে মামলা দায়ের করেন ওই মামলায় ওয়াসিম ও আনোয়ার নামে দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই জবানবন্দিতেও এই বিবরণ রয়েছে।

বাবুল বলেছেন তাঁর ‘নার্ভ’ যথেষ্ট শক্ত

পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বাবুল আক্তার তাঁর সন্তানদের নিয়ে কিছুটা বিচলিত। তবে রিমান্ডের দুদিনে তিনি মামলাসংক্রান্ত ব্যাপারে তেমন কোনো কথা বলেননি। একরকম নিরুত্তর ছিলেন। বাবুল বলেছেন, তাঁর ‘নার্ভ’ যথেষ্ট শক্ত আছে। এখন পর্যন্ত স্ত্রী হত্যার আসামি হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কোনো ইচ্ছে প্রকাশ তিনি করেননি। কথা বলছেন খুব কম।

প্রথম মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন

এর আগে গত বুধবার পিবিআই মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের করা প্রথম মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেছেন, তদন্তে পাওয়া সাক্ষ্যপ্রমাণ, এজাহার, আগের তদন্ত কর্মকর্তাদের তদন্তের ফল, বিভিন্ন আলামত, সিসিটিভি ফুটেজ, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, অস্ত্রের ব্যালিস্টিক পরীক্ষা, আসামি ও সাক্ষীদের জবানবন্দি, মোটরসাইকেল উদ্ধার ও সিডিআর পর্যালোচনা করে দেখেছেন, বাবুল আক্তার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। নিজেকে বাঁচাতে জঙ্গি হামলার কাল্পনিক ঘটনা সাজান।

তবে হত্যাকাণ্ডে আল-কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সম্পৃক্ততার কথা উঠলে তারা এক বিবৃতিতে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানায়। তারা ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয় বলে বিবৃতি দেয়। ২০১৬ সালের গুপ্তহত্যার বেশির ভাগ ঘটনায় দায় স্বীকার করে আনসার আল-ইসলাম। তবে নিন্দা জানানোর ঘটনা ওটাই ছিল প্রথম।
স্ত্রী নিহত হওয়ার পর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়ে বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। দীর্ঘদিন মামলাটি ঝুলে থাকার পর চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত তদন্ত শেষ করার কথা বলেন।

রিমান্ডে বাবুল

প্রায় পাঁচ বছর পর গত বুধবার প্রথম মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বাবুল এখন পাঁচ দিনের রিমান্ডে পুলিশি হেফাজতে আছেন।

স্ত্রী খুন হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বাবুল আক্তার। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি একটি ব্যবসা শুরু করেছিলেন বলে তাঁর পরিচিতজনেরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।