বোমায় আহত ছাত্রদল নেতা মারা গেছেন

পুরান ঢাকার লালবাগে বিস্ফোরণে আহত ছাত্রদলের নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে বাপ্পী (২৫) গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন।
আহত বাপ্পীর ভাগনে সুমনা আক্তার ওরফে হ্যাপী (১৩) ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে এবং ছয় বছরের লিপন শেরেবাংলা নগরে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাদের সেরে উঠতে সময় লাগবে।
বাপ্পী কাঁটাবনে যে জায়গায় দীর্ঘদিন থাকতেন, সেখানকার বাসিন্দারা তাঁকে ‘ককটেল বাপ্পী’ হিসেবে চেনেন বলে জানান। পুলিশ বলছে, নিউমার্কেট থানায় বাপ্পীর বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানো ও বিস্ফোরক আইনে পাঁচটি মামলা আছে।
গত বুধবার বিকেলে লালবাগের ঢাকেশ্বরী সড়কে পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক বিস্ফোরণে নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাপ্পীর ডান হাতের কনুই পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিস্ফোরণে তাঁর বাঁ হাত ও চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, বোমা তৈরির সময় ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার দেবপুরে। বাবার নাম আবদুল মান্নান।
লালবাগ থানার পুলিশ জানায়, বুধবার মধ্যরাতে বাপ্পী (নিহত), তাঁর বোন ঝুমুর ও ভগ্নিপতি আবদুল হাকিমকে আসামি করে বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইনে মামলা করে পুলিশ। গতকাল ঝুমুরকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজউদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, বাপ্পী যে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটে, তা নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় আটক সাতজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এজাহারভুক্ত পলাতক আসামি বাপ্পীর ভগ্নিপতি হাকিমকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গানপাউডার গরম করার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে বলে জিজ্ঞাসাবাদে ঝুমুর জানিয়েছেন।
লালবাগ থানায় হওয়া মামলার বিবরণে বলা হয়, আসামিরা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির সময় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক নিজ হেফাজতে রেখেছে। তারা লালবাগসহ মহানগরের বিভিন্ন স্থানে একযোগে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্যক্তির জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করেছে।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত খান প্রথম আলোকে বলেন, বোমা বাপ্পীর বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে গাড়ি পোড়ানোর দুটি ও বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইনের দুটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া বিস্ফোরক আইনের একটি মামলার তদন্ত চলছে।
তবে বাপ্পীর মা নূরজাহান বেগম বলেন, বোমা বানাতে গিয়ে নয়, কক্ষ গরম করতে গিয়ে বড় একটি লাইটের বিস্ফোরণে তাঁর ছেলে মারা গেছে। তাঁর দাবি, বাপ্পী সন্ত্রাসী নন, ডিশ সংযোগ মিস্ত্রি। ছাত্রদলের রাজনীতি করার কারণে মামলা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে নগরের কাঁটাবনের ঢালে সেখানকার বাসিন্দারা জানান, বাপ্পীকে তাঁরা ‘ককটেল বাপ্পী’ হিসেবে চেনেন। রাস্তাঘাটে তাঁকে আড্ডা দিতে দেখা যেত, পড়াশোনাও করেননি। বছর খানেক আগে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এলাকায় পোস্টার দেখে তাঁরা জেনেছেন, ‘ককটেল বাপ্পী’ ছাত্রদলের নেতা। গত বছর রমজানের আগে কারাগার থেকে তিনি জামিনে মুক্ত হন।
কাঁটাবন ঢালের এক পান দোকানি বলেন, বাপ্পী কাঁটাবনেই বড় হয়েছেন। আগে তাঁরা কাঁটাবনের ঢালে জামে মসজিদ-সংলগ্ন সরকারি জমিতে বস্তি তুলে থাকতেন। তিন-চার বছর আগে এখান থেকে বস্তি উচ্ছেদের পর তাঁরা অন্যত্র চলে যান। তবে কাঁটাবন জামে মসজিদের পাশে তাঁর বাবার পানের দোকান আছে।
ওই পান দোকানে গিয়ে বাপ্পীর মা-বাবার দেখা মেলে। তাঁরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, এক ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে বাপ্পী ছোট। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন তাঁরা দিশেহারা। কাল ঢাকেশ্বরীর বাপ্পীর ভাড়া বাসায় তালা ঝুলতে দেখা যায়।