ভুল মাপের জাতীয় পতাকা বিক্রির ধুম
বিজয় দিবস আসায় সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো পাবনার বেড়া উপজেলায়ও জাতীয় পতাকার চাহিদা বেড়েছে। আর এ চাহিদা পূরণে ভ্রাম্যমাণ পতাকাবিক্রেতারা উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে ঘুরে দেদারসে বিক্রি করছেন পতাকা। কিন্তু যে পতাকাগুলো বিক্রি করা হচ্ছে সেগুলোর বেশির ভাগেরই মাপ সঠিক নয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা ১৯৭২ অনুযায়ী, জাতীয় পতাকার মাপ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০: ৬। আয়তক্ষেত্রাকার গাঢ় সবুজ রঙের পতাকার মাঝখানে থাকবে একটি টকটকে লাল বৃত্ত। বৃত্তটি পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসার্ধবিশিষ্ট হবে। এ ছাড়া ভবন অনুযায়ীও জাতীয় পতাকার মাপের তারতম্য রয়েছে।
সরেজমিনে গতকাল উপজেলার বেড়া বাজার, বেড়া বাসস্ট্যান্ড, কাশীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০ থেকে ১২ জন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাকে জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব বিক্রেতার কাছে থাকা পতাকাগুলোর বেশির ভাগই ভুল মাপে তৈরি করা বলে দেখা গেল। আর এই পতাকাগুলোই ব্যবসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে দেদারসে কেনা হচ্ছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ (১৬ ডিসেম্বর) এসব ভুল মাপের পতাকাগুলোই টানানো হবে। সেই সঙ্গে একটি পতাকা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ থাকায় আগামী জাতীয় দিবসগুলোতেও হয়তো টানানো হবে এসব পতাকা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, জাতীয় পতাকার সঠিক মাপের বিষয়টি সম্পর্কে ক্রেতা-বিক্রেতা অনেকেরই তেমন ধারণা নেই। এ ছাড়া মাপের ব্যাপারে তদারকির ব্যাপারেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ।
কাশীনাথপুর বাজারে পতাকা বিক্রির সময় কথা হয় ভ্রাম্যমাণ পতাকাবিক্রেতা আকাশ, হাসান, সুজন ও জহুরুলের সঙ্গে। তাঁরা প্রত্যেকেই বলেন, পতাকার আকারের মাপ ঠিক রাখার বিষয়টি তাঁরা কেউই ভালোমতো বোঝেন না। তাঁরা শুধু বোঝেন লাল-সবুজের পতাকা হলেই হলো। ক্রেতারাও কখনো পতাকার মাপের ব্যাপারে তাঁদের কোনো প্রশ্ন করেননি বলে তাঁরা জানান। তাঁরা আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি, পয়লা বৈশাখসহ বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখে তাঁরা সারা দেশে ঘুরে ঘুরে পতাকা-ফেস্টুন ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন। এসব দিবসকে সামনে রেখে পতাকার চাহিদা বেড়ে যায়। এ জন্য পতাকার মাপের বিষয়টি না ভেবেই তাঁরা পাইকারি কত দামে পতাকা কিনলেন এবং কত লাভ হলো সে বিষয়টির দিকেই বেশি নজর দেন।
পতাকা কেনার পর বেড়া বাজারের দুজন ব্যবসায়ী বলেন, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পতাকা টাঙানো বাধ্যতামূলক। আগের পতাকা পুরোনো হওয়ায় তাঁরা এবার নতুন পতাকা কিনেছেন। পতাকার মাপ ঠিক আছে কি না সে বিষয়টি তাঁরা ভাবেননি।
বেড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ইসাহাক আলী বলেন, ‘লাল-সবুজের পতাকার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি। যেহেতু পতাকার মাপ সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তাই ভুল মাপের পতাকা টাঙানো দেখলে কষ্ট লাগে।’ এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুন নাহার বলেন, ‘ভুল মাপের পতাকা বিক্রি বা টাঙানো দুটোই অন্যায়। সঠিক মাপের পতাকা ব্যবহারের বিষয়টি তদারকির জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারপরেও বিষয়টি আমি নিজে দেখব।’