ভুয়া চিকিৎসককে চেনাবে নম্বর

.
.

চিকিৎসকদের ভিজিটিং কার্ড, ব্যবস্থাপত্র, নামফলক ও সাইনবোর্ডে তাঁদের নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করার পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। পেশাজীবী চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণকারী এই সংস্থাটি বলেছে, ভুয়া চিকিৎসক শনাক্ত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএমডিসি গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
ইতিমধ্যে বিষয়টি বিএমডিসি আইনে সংযোজন করতে সংস্থাটি উদ্যোগও নিয়েছে।

নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করার ওপর জোর দিয়ে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার মো. জাহেদুল হক বাসুনিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিলে নিবন্ধিত চিকিৎসক প্রায় ৮০ হাজার। বিএমডিসির ওয়েবসাইটে (http://bmdc.org.bd/doctors-info/) ছবিসহ নিবন্ধিত সব চিকিৎসকের নিবন্ধন নম্বর আছে। অথচ ভিজিটিং কার্ড, ব্যবস্থাপত্র, নামফলক ও সাইনবোর্ডে নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করেন—এমন চিকিৎসকের সংখ্যা হাতে গোনা। চিকিৎসক ও জনসাধারণ দুই পক্ষের জন্যই চিকিৎসকদের নিবন্ধন নম্বরটি প্রকাশ্যে আসা জরুরি। প্রথমবারের মতো বিএমডিসির এই উদ্যোগটি বাধ্যতামূলক করতে তা আইনে সংযোজনের জন্যস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভুয়া চিকিৎসকদের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। বিএমডিসির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে আসার পর তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা বলছে, প্রধানত র‍্যাবের এই শাখা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে রাজধানীর বাইরে কোনো কোনো জায়গায় পুলিশও বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান চালাচ্ছে।

র‍্যাবের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে গত তিন বছরে ৩৫ জন ভুয়া চিকিৎসককে নয় মাস থেকে দুই বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে র‍্যাব। এর মধ্যে ২০১৪ সালে ৩২ জন ভুয়া চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁদের মধ্যে ২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডসহ জরিমানা এবং বাকিদের শুধু জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার পরিমাণ মোট ৩৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। ২০১৫ সালে দুজনকে ও ২০১৬ সালে একজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ থাকলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হয় বলে মনে করেন র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘অনেক ভুয়া চিকিৎসক দিনের পর দিন সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা ভুয়া চিকিৎসকদের সম্পর্কে তথ্য পেয়ে গ্রেপ্তার করি, আইনি ব্যবস্থাও নিচ্ছি।’

চিকিৎসকদের নিবন্ধন নম্বর ব্যবহারের এ উদ্যোগকে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইকবাল আর্সলান বলেন, ভুয়া চিকিৎসক কে, তা শনাক্ত করা কঠিন। এই কাজে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ভিজিটিং কার্ড ও ব্যবস্থাপত্রে নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলে কোনো চিকিৎসক সম্পর্কে কারও কোনো সন্দেহ হলে বিএমডিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে সঠিক তথ্য তিনি পাবেন।

যে অল্প কয়েকজন চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করা শুরু করেছেন তাঁদের মধ্যে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম একজন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএমডিসির বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকেই নতুন ব্যবস্থাপত্রে নিবন্ধন নম্বর (৫৫১৪) লেখা শুরু করেছি। বিষয়টি ইতিবাচক বলে মনে করি। আশা করি, অন্য চিকিৎসকেরাও দ্রুত এই চর্চা শুরু করবেন।’

নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ এই মুহূর্তে প্রযুক্তি সুবিধাবঞ্চিত সাধারণ মানুষের খুব একটা কাজে আসবে না বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রশিদ-ই-মাহবুব। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘তবে ভুয়া চিকিৎসক শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য এটা কাজে আসতে পারে।’ ভুয়া চিকিৎসকদের ঠেকাতে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে আরও তৎপর হওয়ার বিষয়েও তিনি তাগিদ দিয়েছেন।