ভুয়া প্রবেশপত্র ও নিয়োগপত্র দিতেন তাঁরা

প্রতারক চক্রের দেওয়া ভুয়া নিয়োগপত্র
ছবি: সংগৃহীত

চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বনানী থানায় হওয়া এক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. মোশাররফ হোসেন ও মো. জিয়া উদ্দিন। সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) দারুস সালাম থানার আনন্দ নগর এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার এ দুজনকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, এ চক্রে আরও বেশ কিছু সদস্য রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার মো. তারেক বিন রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রতারক চক্র প্রথমে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ই-মেইলে জীবনবৃত্তান্ত, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি ও অন্যান্য নথিপত্র সংগ্রহ করত। এরপর ভুয়া প্রবেশপত্র তৈরি করে প্রার্থীদের ই–মেইলে পাঠাত। বিকাশ বা রকেটে টাকা নিয়ে জানিয়ে দিত চাকরিপ্রার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হয়েছেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ আরও জানায়, কিছুদিন পর চক্রের আরেক সদস্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মেডিকেল ও অন্যান্য খরচ বাবদ আরও কিছু টাকা চাইতেন। টাকা পেলে তৈরি হতো ভুয়া নিয়োগপত্র। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য ‘QR Code Generator’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থীর নাম–ঠিকানাসংবলিত একটি ‘QR Code’ তৈরি করে ভুয়া নিয়োগপত্রে সেটি যুক্ত করতেন চক্রের সদস্যরা। এরপর তাঁরা বলতেন, ‘QR Code Scanner’ দিয়ে আপনার নিয়োগপত্রটি সঠিক কি না, যাচাই করুন। প্রতারণার শিকার ব্যক্তি যখন তাঁর মুঠোফোনের ‘QR Code Scanner’ দিয়ে যাচাই করতেন, তখন সেখানে নিজের তথ্য দেখতে পেতেন। এরপর চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে হতো।

নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলে জানতে পারতেন, নিয়োগপত্রটি ভুয়া। আর ওই চক্রের সদস্যরাও এর মধ্যে সব ফোন বন্ধ করে দিতেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বাদী আনসার সদস্য মো. ইসহাক আলী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দায়িত্বপালন করেন। প্রায় আড়াই মাস আগে মোশাররফ ও সবুজ নামের দুজন ক্যানসারে আক্রান্ত এক শিশুকে ভর্তি করতে এসেছিলেন। সেখানেই তাঁদের সঙ্গে পরিচয়। মোশাররফ নিজেকে সেনাবাহিনীর বেসামরিক সদস্য ও সবুজ নিজেকে পুলিশ সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। প্রতারকদের পরিচয় শুনে ইসহাক আশ্বস্ত হন।
মোশাররফ ইসহাককে বলেন, তিনি সেনাবাহিনীতে লোক নিয়োগ দেন। তাঁর আত্মীয়স্বজন কেউ থাকলে তিনি ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।

মো. ইসহাক আলী এরপর তাঁর ছেলে ও ভাগনেকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিন লাখ টাকার চুক্তি করেন প্রতারকদের সঙ্গে। একপর্যায়ে কথাবার্তায় সন্দেহ হয় ইসহাকের। তিনি এক আত্মীয়ের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ভুয়া ছিল।

আনসার সদস্য মো ইসহাক আলীর কাছে প্রশ্ন ছিল, তিনি কেন ছেলের নিয়োগের জন্য টাকা দিতে গেলেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘লোভে পড়ে ভুল করেছি।’