রাজধানী সুপার মার্কেটে আবার চাঁদাবাজি!

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের এক বছর পরও টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এদিকে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর বিপণিবিতানটিতে আবারও চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজধানী সুপার মার্কেটের ৪৫ জন ব্যবসায়ী চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে দুই সপ্তাহ আগে র্যাবের মহাপরিচালক, র্যাব-৩ ও র্যাব-১০-এর পরিচালকের কাছে আবেদন করেন। বিপণিবিতানটিতে গেলে কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোর কাছেও চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন।
‘ময়নুল হক মনজু গংদের হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য আবেদন’ শিরোনামে র্যাবের কাছে করা ওই আবেদনে ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন ময়নুল হক (মনজু) ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ময়নুল হক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি ওই বিপণিবিতানের দোকান মালিক সমিতির ‘স্বঘোষিত’ সভাপতি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
র্যাব-১০-এর পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর রাজধানী মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে একাধিকবার ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ২০১৫ সালের ৮ জুলাই মধ্যরাতে কয়েকজনকে কারাদণ্ডও দিয়েছিলেন।
২০১৫ সালের ৮ জুলাই ওই মার্কেটে র্যাবের হাতে আটক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিমকে পরে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওই বিপণিবিতানে চাঁদাবাজি নিয়ে এর আগে একাধিকবার প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ময়নুল হক বর্তমানে বিদেশে থাকায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এর আগে ওই মার্কেটে চাঁদাবাজির সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেছিলেন, হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী তাঁর বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার করছেন। তিনি দোকান মালিক সমিতির সভাপতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটে ১ হাজার ৭৮৮টি দোকান আছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দোকানের পাশাপাশি মার্কেটের প্রবেশপথ ও ফুটপাতে অবৈধ দোকান বসিয়ে সেগুলো থেকে টাকা আদায় করছে চাঁদাবাজেরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই মার্কেটের প্রবেশপথ ও ফুটপাতে অবৈধ ছোট ছোট দেড় শতাধিক টেবিল বা চৌকি বসানো। এগুলোতে পসরা সাজানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, টেবিল বা চৌকিতে দোকান বসাতে একেকজনকে ময়নুলের লোকদের দিনে ৬০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ফুটপাতের একজন হকার বলেন, চাঁদা না দিলে হকারদের বসতে দেওয়া হয় না।
মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরও পুলিশ ময়নুল গংদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা আতঙ্কে আছেন। নাম প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছেন। অন্তত ১৫ জন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, বিভিন্ন কৌশলে চাঁদাবাজি হচ্ছে। কিছুদিন আগে দোকান বিক্রি করা একজন দোকানমালিকের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। সাত মাস আগে ব্যবসায়ী খোকন মিয়া মারা গেলে তাঁর দোকানের সব শাড়ি-কাপড় দোকান মালিক সমিতির কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে খোকনের বাবা র্যাব-১০-এর পরিচালক ও ওয়ারী থানাকে জানালেও শাড়ি-কাপড় ফেরত পাননি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বাণিজ্যিক এলাকায় বিদ্যুতের বিল প্রতি ইউনিট ৮-৯ টাকা হলেও মালিক সমিতির নামে প্রত্যেক দোকানির কাছ থেকে ১৪ টাকা করে নিচ্ছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, চাঁদা না দিলে মারধর ও দোকানে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
র্যাব কার্যালয়ে করা আবেদনে চাঁদাবাজ হিসেবে কয়েকজনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ আট ব্যবসায়ী ওয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জেহাদ হোসেন কয়েক দিন আগে প্রথম আলোকে বলেন, র্যাবের কাছে দেওয়া ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজির অভিযোগের অনুলিপি পেলে তিনিও তদন্ত করবেন।