রাতারাতি সাইনবোর্ড, ২০৪ শতকের মালিকানা দাবি

৩৫ পরিবারের ঘুম কেড়ে নিয়েছে সিলেটের  ফিজা অ্যান্ড কোং
৩৫ পরিবারের ঘুম কেড়ে নিয়েছে সিলেটের ফিজা অ্যান্ড কোং

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস লাগোয়া জনবসতির নাম বড়গুল। টিলাবেষ্টিত প্রতিটি চার থেকে ছয় শতক জমিতে একেকটি বসতঘর। কোনো কোনো প্লটে বাড়ি নির্মাণ করার প্রস্তুতি চলছে। এ রকম একটি প্লটে রাতের বেলা তৈরি হয় টিনের ঘর। এক পাশে সাঁটানো হয় সাইনবোর্ড। নজরুল ইসলাম বাবুল নামের এক ব্যক্তিকে ক্রয়সূত্রে জমির মালিকানা দাবি করা হয়।
নজরুল ইসলাম ফিজা অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি বেকারি কারখানার মালিক। কারখানাটি সিলেট নগরেই অবস্থিত।
১০ ডিসেম্বর সকাল থেকে সাইনবোর্ডটি দেখা যাচ্ছে। সাইনবোর্ডে দাগ-খতিয়ান উল্লেখ করা ২০৪ শতকের ওই জমি প্রায় দুই দশক আগে বিভিন্নজনের কাছ থেকে কিনে হিন্দু-মুসলিম মিলে প্রায় ৩৫টি পরিবার বসবাস করছে।
গত রোববার রাতে বড়গুল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাইনবোর্ড ঘিরে উদ্বিগ্ন পরিবারগুলোর সদস্যরা বৈঠকে বসেছেন। বড়গুলের বাসিন্দা হিমাংশু আচার্য্য জানান, এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে ১৫টি হিন্দু ও বাকি ২০টি মুসলিম পরিবার রয়েছে। সবাই ছোট-বড় চাকরিজীবী। চাকরি জীবনের সঞ্চয় থেকে বাড়ি করে সেখানে বাস করছেন।
হিমাংশু নিজে ২০০৬ সালে ছয় শতক জায়গা কিনে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুই তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। জায়গার কাগজপত্র সঠিক ছিল বলেই ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিয়েছে এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন নিষ্কণ্টক জায়গার মালিক দাবি করে ফিজা অ্যান্ড কোম্পানি শুধু ঘুম কেড়ে নিচ্ছে না, আমাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় দিয়ে করা মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।’
গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সাইনবোর্ডের পাশে সদ্যনির্মিত টিনশেড ঘরে রাতারাতি বিদ্যুৎ সংযোগও নেওয়া হয়েছে। একাধিক লোক সেখানে পালা করে থাকছেন। জানতে চাইলে একজন ‘তত্ত্বাবধায়ক’ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘জায়গার মালিক ফিজা কোম্পানি। কারখানা করার জন্য একসঙ্গে ২০৪ শতক জায়গা মূল মালিকের কাছ থেকে সম্প্রতি কেনা হয়েছে।’ তাঁর কাছে মূল মালিক কে, জানতে চাইলে ফিজা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ওই জায়গা আসল মালিকের কাছ থেকে কিনেছেন বলে দাবি করেন নজরুল ইসলাম। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে জায়গা কেনা হয়েছে জানিয়ে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এসব জায়গা আমি আসল মালিকের কাছ থেকে কিনেছি। যেহেতু এখানে অনেক বসতবাড়ি হয়ে গেছে। তাই এলাকার পঞ্চায়েত কমিটির মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছি যে আপনারা আপনাদের কাগজপত্র নিয়ে আমার কাছে আসুন। আমরা দুই পক্ষ বসি। যার কাগজপত্র সঠিক, সেই জায়গার মালিক হবে।’ অন্য সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলে তাঁর নামে সাইনবোর্ড সাঁটানো, জোর করে ঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে জোরজবরদস্তির কিছু ঘটেনি। আমি একটি বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক। আমার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, এ ব্যাপারে অবশ্যই ইনসাফ দেখাব।’
যে জায়গায় সাইনবোর্ড সাঁটানো, সেটি ১৩ শতক জায়গায় দুটি প্লট। মালিক শাহ শামীম আহমদ। ১৯৯৭ সালে তিনি এ জায়গা কিনেছিলেন। সাইনবোর্ড সাঁটানোর বিষয়টি তিনিসহ ৩৫টি পরিবার বড়গুল পঞ্চায়েত কমিটিকে জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন।