শ্রী নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় লোনা পানির প্রবেশ ঠেকাতে শ্রী নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়েছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা। ছবিটি সম্প্রতি দত্তগাতী এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় লোনা পানির প্রবেশ ঠেকাতে শ্রী নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়েছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা। ছবিটি সম্প্রতি দত্তগাতী এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় প্রবহমান শ্রী নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বিল ডাকাতিয়ায় লোনা পানির প্রবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা ওই বাঁধ দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন।
কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, ভবদহ জলকপাটের (স্লুইসগেট) সামনে শ্রী নদী থেকে একটি শাখা বের হয়ে উত্তর দিকে গেছে। এরপর কিছুটা এঁকেবেঁকে শাখাটি পূর্বমুখী হয়েছে। অভয়নগর উপজেলার সীমানা পার হয়ে এটি খুলনার বিল ডাকাতিয়ার মধ্য দিয়ে হামকুড়া নদীর সঙ্গে মিশেছে। হামকুড়া বর্তমানে মৃত। ভবদহ জলকপাটের কয়েক শ গজ উজানে শ্রী নদীর ওপর ছয় দ্বারের আরেকটি জলকপাট রয়েছে। এলাকাবাসী নদীটির নাব্যতা ধরে রাখতে নিজেদের উদ্যোগে ওই জলকপাট দিয়ে নদীতে জোয়ারের পানি ঢোকান এবং ভাটার পানি বের করেন। নদীটির পানি বোরো আবাদের জন্য ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে দামুখালী বিল, বিল ডাকাতিয়াসহ এলাকার অন্যান্য বিলের পানি এই নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ১৯ মে ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন ও জামিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত হোসেন বিশ্বাস পুলিশ ও মাটি কাটার শ্রমিক নিয়ে দত্তগাতী গ্রামে শ্রী নদীর পাড়ে আসেন। আকরাম হোসেনের নির্দেশে সাহাদাত ওই দিন এবং ২০ মে শ্রমিক দিয়ে ভবদহ জলকপাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উজানে দত্তগাতী গ্রামের অংশে প্লাস্টিকের বস্তায় মাটি ভরে আড়াআড়িভাবে নদীতে বাঁধ দেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দত্তগাতী গ্রামের মাঝখানে নদীটি কিছুটা অপ্রশস্ত। গ্রামের কিছু মানুষ নদীর দুই পাড়ে মাটির রাস্তা তৈরি করায় এটি আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এরপর প্রায় ২২ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো তৈরি করে তার ওপর দিয়ে যাতায়াত করা হয়। সাঁকোর নিচেই মাটির বস্তা ফেলে নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
দত্তগাতী গ্রামের মোফাজ্জেল আলী মোল্যা (৫০) বলেন, বাঁধের কারণে নদীর স্রোত বন্ধ হয়ে গেছে এবং পলি জমে নদী মরে যাচ্ছে।
উপজেলার পায়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুল আলম বলেন, ‘জোয়ার ওঠানো হয়েছে বলে উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়েছেন।’
৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিলন হালদার বলেন, ‘শুনেছি, ওই সময় এলাকায় চেয়ারম্যান আকরাম হোসেনের একটি মাটির প্রকল্পের কাজ চলছিল। জোয়ারের পানি প্রকল্পে ঢুকে পড়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে নদীতে বাঁধ দেওয়ার নির্দেশ দেন।’
সাহাদাত হোসেন বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘জোয়ার ওঠানোর কারণে লোনা পানি ঢুকে বিল ডাকাতিয়ার অনেক মাছের ঘেরের প্রচুর সাদা ও দেশি মাছ মরে গেছে। লোনা পানির কারণে বিলে এবার আউশ ও আমন ধান হবে না। এ জন্য একজন প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমি শ্রমিকদের দিয়ে নদীটি বেঁধে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত মেহনাজ বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। আমি দ্রুত খোঁজ দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করব।’