সিলেটে একই ফ্ল্যাট একাধিকবার বিক্রি
সিলেটে একটি ভবনের অনেকগুলো ফ্ল্যাট একাধিকবার বিক্রির ঘটনা ঘটেছে। আলাদা দুটি কোম্পানি এই বিক্রিবাট্টা করেছে। এ ঘটনায় মামলা করেছেন দুজন ভুক্তভোগী।
কোম্পানি দুটির নাম ইম্পালস বিল্ডার্স লিমিটেড ও সিলেট মার্ট প্রাইভেট লিমিটেড। সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থল রিকাবীবাজার এলাকায় এই ভবনের অবস্থান। জেলা স্টেডিয়াম লাগোয়া ৮০ শতক জায়গার ওপর ভবনটির চারতলা শেষ করে বর্তমানে পঞ্চম তলার নির্মাণকাজ চলছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ভবনের তৃতীয় তলারফ্ল্যাট বিক্রির পর দলিলাদি হস্তান্তরের সময় প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। এভাবে পাঁচতলা ভবনের বেশির ভাগ ফ্ল্যাটই একাধিকবার বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রথম আলোর কাছে এ রকম নয়টি ফ্ল্যাট একাধিকবার বিক্রির কাগজপত্র এসেছে।
ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ তৌহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ২ নভেম্বর সিলেট মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন। ১৫ নভেম্বর আব্বাস আলী নামের আরেক প্রতারিত ব্যক্তিও একই আদালতে মামলা করেন। দুটি মামলায় একই ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত দুই আবাসন কোম্পানির বিরুদ্ধে একই ফ্ল্যাট একাধিকবার বিক্রির অভিযোগ করা হয়।
মামলা দুটিতে দুই আবাসন কোম্পানিরই চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা সিরাজুল ইসলামসহ নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ ও তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশের বিশেষায়িত শাখা পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই সিলেটের পরিদর্শক লিটন চন্দ্র পাল।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁরা আম্বরখানায় কলেজটি পরিচালনা করে আসছিলেন। ২০১৪ সালে তাঁরা একটি নতুন ক্যাম্পাস করতে এই ভবনে যোগাযোগ করেন। ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ এটির নিচতলায় কলেজ স্থানান্তরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন তাঁরা। এ সময় সাড়ে চার লাখ টাকার একটি চেক দেওয়া হয় ইম্পালস বিল্ডার্স লিমিটেডকে। চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণাধীন ভবন ৩৩ লাখ ২২ হাজার টাকা খরচ করে ব্যবহারের উপযোগী করার পর চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি কলেজ চালু করেন। এ সময় অনেক ফ্ল্যাট একাধিকবার বিক্রির ঘটনা জানতে পারেন তাঁরা। প্রতারিত ক্রেতাদের বেশির ভাগই প্রবাসী। পরে সেখান থেকে ক্যাম্পাস গুটিয়ে প্রতারণার মামলা করেন তিনি। তৌহিদুল আরও বলেন, তিনি মামলা করার পর অন্য ক্রেতারাও সরব হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আব্বাস আলী নামের একজন প্রবাসীও মামলা করেছেন। সৌদিপ্রবাসী আব্বাস আলীর বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রায়পুরে।
ইম্পালস বিল্ডার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সিলেট মার্ট প্রাইভেট লিমিটেডেরও চেয়ারম্যান হন। একাধিকবার ফ্ল্যাট বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁর দুটি কোম্পানিই বৈধ। একটির পর আরেকটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাট একাধিকবার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে ঝামেলা বাধিয়েছেন আসলে তৌহিদুল। তিনি কলেজ ক্যাম্পাস করতে চাইলে আমরা চুক্তি করি। পরে বিশেষ কারণে তাঁকে নিচতলা থেকে তৃতীয় তলায় যেতে বলায় নানা রকম অভিযোগ করে সরে পড়েন। বিষয়টি আপসে নিষ্পত্তি করতে চাইলে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করায় আমরা সমাধান করতে পারিনি।’
অপর মামলার বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তৌহিদুল এখন বিভিন্নজনকে ফুসলিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। আমরা মামলা আইনিভাবে মোকাবিলা করব।’