১০টি ফুটবল মাঠের সমান বন উজাড় প্রতিদিন

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে বনভূমি উজাড় হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে বনভূমি উজাড় হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
>

• ছয় মাসে হাতির আক্রমণে ১২ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু।
• বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা আছে।
• প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা এর ঝুঁকিতে আছে।
• প্রত্যাবাসন দ্রুত করার তাগিদ।

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন গড়ে ১০টি ফুটবল মাঠের সমান বনভূমি উজাড় হচ্ছে। গত ছয় মাসে হাতির আক্রমণে ১২ জন রোহিঙ্গাসহ একজন স্থানীয় অধিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তিন দিন আগে ভূমিধসে আট বছরের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল রোববার কক্সবাজারের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেওয়া হয়। সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক এনজিওর মোর্চা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ছয় মাসে সরকার, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক এনজিও এবং দেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রোহিঙ্গাদের সহায়তায় কী করেছে, তার বিবরণ তুলে ধরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, সামনে বর্ষাকাল। বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা আছে। প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা এর ঝুঁকিতে আছে। এদের সরিয়ে নেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, জায়গার নিদারুণ সংকট। নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কথা বলেছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে সে রকম হতে পারে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত আইএসসিজির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী সুমবুল রিজভী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বা স্থানান্তর হতে হবে তাদের পূর্ণ সম্মতিতে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সুমবুল রিজভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আপনাদের দেশে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানিয়ে আপনারা অগণিত মানুষের জীবন রক্ষা করেছেন। আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আধুনিক বিশ্বে এ ধরনের একটি শক্তিশালী উদাহরণ সৃষ্টি করায় আপনাদের ধন্যবাদ।’

সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে সাংবাদিকদের নিষেধ করা হয়।

সাংবাদিকদের বলা হয়, এখনো রোহিঙ্গারা আসছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ বছরের জানুয়ারির ২৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে। কিন্তু গত এক মাসে কত এসেছে, তার হিসাব দেওয়া হয়নি।

রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে স্থানীয় মানুষ নানা প্রতিকূলতায় পড়ছে। সাংবাদিকদের বলা হয় তা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছু উদ্যোগও নিয়েছে। যেমন, কৃষি সরঞ্জাম ও বীজ বিতরণ, সড়ক নির্মাণ, নলকূপ স্থাপন, সামাজিক বনায়ন। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে যেন রোহিঙ্গাো বিরোধে না জড়ায়, সে ব্যাপারেও সরকার ও আইএসসিজি সতর্ক আছে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আস্তর্জাতিক এনজিওর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকালও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে ৪১টি পরিবারের ১৪১ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতি চললেও মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রবেশ বন্ধ হয়নি। সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি কতটা হয়েছে, এ নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশে আগে থেকে অবস্থান করা চার লাখের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে নতুন আসা পৌনে সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীকে টেকনাফের কুতুপালং ও উখিয়ার লেদা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। নতুন আশ্রয় শিবির গড়ে তোলার জন্য বিপুল পরিমাণে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।