১৮টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে চক্রটি

চক্রের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজনের নাম পেয়েছে ডিবি।

মাহবুবা নাসরিন
ছবি: সংগৃহীত

নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইসের (প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজে ব্যবহার করা হয়) মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে এই জালিয়াতি করে আসছে। গত ১০ বছরে অন্তত ১৮টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে তারা। এভাবে বিপুল টাকার মালিক হয়েছেন চক্রের সদস্যরা। এই চক্রের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে ব্যাংক, রেলওয়ে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

২১ জানুয়ারি প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীন ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় রাজধানী থেকে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর দুই দিনের রিমান্ডে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পেয়েছেন ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত হয়ে গ্রেপ্তারের পর গত রোববার মাহবুবাকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যের পদ থেকে অব্যাহতি ও দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়।

প্রশ্নফাঁস করে ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৮ প্রার্থীর সঙ্গে টাকার চুক্তি করেছিল চক্রটি। তাঁদের মধ্যে ১২ জন চাকরি প্রার্থীর নাম পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। ওই ১২ জনের একজন হচ্ছেন মাহবুবা নাসরিনের আপন ভাই মো. রানা। ডিবি বলছে, মাহবুবার সঙ্গে এই চক্রে মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের (সিজিএ) বরখাস্ত করা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ও রেলওয়ের সহকারী স্টেশনমাস্টার জহিরুল ইসলাম জড়িত। মাহমুদুল হাসান গ্রেপ্তার হলেও জহিরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কর্মস্থলেও অনুপস্থিত বলেও জানায় ডিবি। এই চক্রের আরও বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের নজরদারিতে রেখেছেন গোয়েন্দারা।

ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বরখাস্ত সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা আগেও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন। একজনের ব্যাংক হিসাব যাচাই–বাছাই করে বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

যেসব নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে চক্রটি

ডিবির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এই চক্রের কোনো কোনো সদস্য ২০১২ সাল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। তাঁরা বিভিন্ন সময় ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, জ্বালানি বিভাগ, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, সমবায় অধিদপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তরের অডিটর, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ অন্তত ১৮টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। এই চক্রের মাধ্যমে ব্যাংক, রেলওয়ে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে নিয়োগ পাওয়া বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই–বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার পর প্রতিবেদনের মাধ্যমে আদালতকে বিষয়টি জানানো হবে।

গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান ও নোমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। আর পলাতক জহিরুল ইসলাম ও তাঁর ভাই রাজু আহমেদ পরিচালনা করেন আরেকটি চক্র। ডিবি জানায়, ২০১৯ সালের দিকে জহিরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরিনের। এর আগে ইডেন মহিলা কলেজের এক বান্ধবীর মাধ্যমে মাহবুবার পরিচয় হয়েছিল আরেকটি চক্রের হোতা নোমান সিদ্দিকীর সঙ্গে। পরে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত এই দুই গ্রুপকে একত্র করে একটি চক্র হিসেবে কাজ শুরু করেন তাঁরা।