গার্ডার তোলার ক্রেন চালাচ্ছিলেন হেলপার

রাজধানীর উত্তরায় বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে প্রাইভেট কারকে চাপা দেওয়ার ঘটনার সময় সেটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী (হেলপার)। তাঁর নাম রাকিব হোসেন। আর বাইরে থেকে তাঁকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন মূল ক্রেনচালক আল আমিন।

আজ এই দুজনসহ ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে গ্রেপ্তারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন জানান, ক্রেনের মূল চালক আল আমিনের হালকা গাড়ি চালানোর অনুমোদন থাকলেও ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেই। ২০১৬ সালে ক্রেন চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে দু–তিনটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করার পর ২০২২ সালের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন।

আর রাকিব তিন মাস আগে এ প্রকল্পের ক্রেন হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে। তাঁর ক্রেন চালনা করার কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছিল না। দুর্ঘটনার পর আল আমিন ও রাকিব ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

গত সোমবার বিকেলে উত্তরার জসীমউদ্‌দীন রোডে বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয় এবং দুজন গুরুতরভাবে আহত হন। এ ঘটনার পর ক্রেনচালক, তাঁর সহকারী, নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীসহ ১০ জনকে ঢাকা, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতী আল মঈন
ছবি: সংগৃহীত

র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি (সিজিজিসি)। সিজিজিসি থেকে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের ওয়ার্ক অর্ডার পায় ইফসকন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর মালিক মো. ইফতেখার হোসেন ও হেড অব অপারেশন আজহারুল ইসলাম ওরফে মিঠু গ্রেপ্তার হয়েছেন। ইফসকনের কাছে বড় ক্রেন না থাকায় তারা ‘থার্ড পার্টি’ প্রতিষ্ঠান বিল্ড ট্রেড কোম্পানির কাছে থেকে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ক্রেনটি ভাড়া নেয়।

এ ছাড়া প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা ফোর ব্রাদার্স গার্ড সার্ভিসের ট্রাফিক ম্যান আফরোজ ও রুবেল এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসির সেফটি ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আলী ও ভারী যন্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা সিজিজিসির প্রকিউরমেন্ট অফিসার মঞ্জুরুল ইসলামকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব জানতে পারে, গ্রেপ্তার ইফতেখার ও আজহারুল ইসলাম অপারেটরদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও ক্রেনের ফিটনেস যাচাই না করেই গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল সড়কে ভারী গার্ডার স্থাপনের কাজে নিয়োজিত করছিলেন।

এ ছাড়া গার্ডার স্থাপনের সময় অতিরিক্ত একটি সহায়ক ক্রেন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না। তাঁরা অতিরিক্ত লাভের জন্য অল্প পারিশ্রমিকে ভারী গাড়ি চালনার লাইসেন্স না থাকা অপারেটর আল আমিনকে নিয়োগ দেন। এ ছাড়া দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ক্রেনের সর্বশেষ ফিটনেস যাচাই করা হয়েছিল ২০২১ সালে। কিন্তু এ বছর ক্রেনের কোনো ধরনের ফিটনেস যাচাই করা হয়নি।

র‍্যাব জানায়, দুর্ঘটনার দিন ভারী গার্ডার স্থাপনের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের নিরাপত্তাবেষ্টনী স্থাপন ও পর্যাপ্ত ট্রাফিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হওয়া সত্ত্বেও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য ডিএমপি ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েছে কাজ চলেছে।