গৃহিণী হয়েও ‘কোটিপতি’ সাবেক কনস্টেবলের স্ত্রী
চট্টগ্রাম নগরের অভিজাত এলাকায় খুলশীতে কোটি টাকা মূল্যের ছয়তলা বাড়ি। যেটির বাজারমূল্য পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় আট কাঠা জমির ওপর টিনশেডের ঘর ও দোকান। এসব সম্পত্তির মালিক জাহানারা বেগম নামের এক গৃহিণী। তাঁর স্বামী মো. সেলিম হাওলাদার পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, স্বামী পুলিশ কনস্টেবলের ‘অবৈধ উপায়ে অর্জিত’ সম্পদের মালিক হন স্ত্রী জাহানারা বেগম।
অবসরে যাওয়ার আগে তিনি দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা (ডিবি), নগর বিশেষ শাখায় (সিটিএসবি) কর্মরত ছিলেন। এর আগে বরিশাল, খুলনা ও গাজীপুরে চাকরি করেন। চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন থাকার কারণে নগরে সবার কাছে ‘ডিবির ক্যাশিয়ার সেলিম’ নামে পরিচিত ছিলেন তিনি।
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে হুন্ডি, মাদক, অবৈধ সোনা ব্যবসায়ী, বিভিন্ন আবাসিক হোটেলসহ অপরাধীদের কাছ থেকে থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
দুদক জানায়, তারা অনুসন্ধানে জাহানারা বেগমের ১ কোটি ৮৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ পেয়েছে। এরপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুদক জাহানারা ও তাঁর স্বামী সেলিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা করে। দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, জাহানারার স্বামী সেলিম হাওলাদার ১৯৭৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালী। চাকরির শুরুতে তিনি বেতন পেতেন ১ হাজার ৭০০ টাকা। আর ২০১৩ সালের জুন মাসে স্বেচ্ছায় যখন অবসরে যান, তখন পেতেন ২৩ হাজার টাকা। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে হুন্ডি, মাদক, অবৈধ সোনা ব্যবসায়ী, বিভিন্ন আবাসিক হোটেলসহ অপরাধীদের কাছ থেকে থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সার্ভিস বুক বা চাকরির খতিয়ান বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, চাকরিজীবনে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে তাঁর ১২ বার শাস্তি হয়েছে।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িটির ছয়তলা পর্যন্ত ১২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে নিচতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন সেলিম। নিচতলায় সড়কের পাশে আছে একটি দোকান। ছয়তলায় ছাদের ওপর একটি টিনের ভাড়া ঘর রয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল সেলিমের স্ত্রী জাহানারা বেগমের ছয়তলা বাড়িটির অবস্থান চট্টগ্রাম নগরের খুলশী থানার পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায়। নগরের লর্ডস ইন হোটেল থেকে ৩০০ গজ পশ্চিমে জাকির হোসেন বাই লেনে বাড়িটির অবস্থান।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িটির ছয়তলা পর্যন্ত ১২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে নিচতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন সেলিম। নিচতলায় সড়কের পাশে আছে একটি দোকান। ছয়তলায় ছাদের ওপর একটি টিনের ভাড়া ঘর রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে জাহানারা বেগম কিছু বলতে রাজি হননি। তাঁর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল মো. সেলিম হাওলাদার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, জায়গাটি তাঁর স্ত্রীর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। কিছু কিনেছেন।
জাকির হোসেন বাই লেনে জায়গাসহ ভবনটির বর্তমান বাজারদর পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা বলে জানান স্থানীয় শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আলম। এদিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দ্রনগর এলাকায় জাহানারা বেগমের নামে ১ কোটি ১০ লাখ ৮৬ হাজার টাকার ঘরসহ জমি রয়েছে।