কলেজছাত্রীকে স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া করিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগে এক কলেজছাত্রীর করা মামলায় ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর নাম শাহজাহান ভূঁইয়া (৩৪)। আজ রোববার সকাল সাতটায় রাজধানীর পীরেরবাগের একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাসাটিতে ভাড়া থাকতেন তিনি।
শাহজাহান ভূঁইয়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির (আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের কমিটি) উপকর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত এই কমিটির মেয়াদ ছিল। মেয়াদের শেষ পর্যায়ে অনেককে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়। এ সময় শাহজাহান সে কমিটিতে স্থান পান। এর আগে তিনি ঢাকা কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ তদন্তে আসামির ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তবে শাহজাহান ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কি না, জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই।
শাহজাহান যে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন, তা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের জয়-লেখক কমিটির সহসভাপতি রানা হামিদ, যিনি সে সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন।
কলেজছাত্রীর অভিযোগ, শাহজাহানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় ফেসবুকে। তিনি আইইএলটিএস কোর্স করবেন শুনে শাহজাহান গত ৬ জুন তাঁকে মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। পরিচয় দেন তাঁর স্ত্রী হিসেবে। কারণ জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, স্ত্রী পরিচয় না দিলে বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে না। এর পর থেকে শাহজাহান ওই বাসাটিতে প্রায়ই যাওয়া–আসা করতেন।
গত ১৩ জুন ওই বাসায় শাহজাহান তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ কলেজছাত্রীর। তিনি বলেন, এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে শাহজাহান তাঁর কাছে ক্ষমা চান এবং তাঁকে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। এরপর তাঁদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। একপর্যায়ে শারীরিক পরিবর্তন অনুভব করেন তিনি। এরপর গত ২৬ জুলাই বাসায় পরীক্ষা করে দেখেন তিনি গর্ভধারণ করেছেন। গর্ভধারণের বিষয়টি শাহজাহানকে জানালে তিনি গর্ভপাত করানোর পরামর্শ দেন। এরপর শাহজাহান তাঁকে গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ান। ওষুধটি খাওয়ার পর শাহজাহান তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী প্রথম আলোকে জানান, তিনি কুমিল্লার একটি সরকারি কলেজের স্নাতকের (পাস) ছাত্রী। তাঁর আগে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের কিছুদিন পর বিচ্ছেদ হয়। এরপরে বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগ্রহ থেকে তিনি আইইএলটিএস করার সিদ্ধান্ত নেন।
একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় শাহজাহানকে বিশ্বাস করেছিলেন জানিয়ে ওই ছাত্রী আরও বলেন, যোগাযোগ বন্ধ করলে তিনি শাহজাহানের পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানান। তবে তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এরপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ঘটনাটি সম্পর্কে জানিয়ে এর বিচার চান। এরপরও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। উল্টো শাহজাহান তাঁকে হুমকি দিতে থাকেন।
ওই তরুণী বলেন, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছিলেন। কোথাও বিচার না পেয়ে ঘটনার সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় পর ২৯ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।
এ নিয়ে জানতে শাহজাহানের বোনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।