ডাকাতেরা নজর রেখেছিল টাকার কালো ব্যাগটিতে, কখন মোটা-কখন পাতলা

ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনছবি : ডিএমপির সৌজন্যে

মিরপুরের মাহমুদ মানি এক্সচেঞ্জের দুই ব্যবসায়ী একটি কালো ব্যাগ নিয়ে একই সড়কে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। এটি দেখে ডাকাতির পরিকল্পনা করে ডাকাতি চক্রটি। এরপর তারা স্থানীয় সূত্র থেকে টাকা আনা–নেওয়ার তথ্য সংগ্রহ করে। পাশাপাশি কয়েক দিন ধরে ওই দুই ব্যক্তির আসা-যাওয়ার সময় ব্যাগটি কখন মোটা, কখন পাতলা থাকে সেটিও নজরদারি করে। ব্যাগ মোটা দেখে ধারণা করে বেশি টাকা আছে। পরে ওই অঞ্চলের মার্কেট কবে বন্ধ থাকে, বন্ধের দিন কখন লোকসমাগম কম থাকে নিশ্চিত হয়ে গত ২৭ মে ডাকাতি করে দলটি।

সেদিন সকালে মিরপুর ১১ নম্বরের বাসভবন থেকে বেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন রাসেল রানা ও জাহিদুল ইসলাম। হাতে ছিল সেই কালো ব্যাগ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পেছনের গলিতে পৌঁছালে তাঁদের কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়ে যায় ডাকাত দলটি। এ সময় তারা ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই গ্রেপ্তার ও ঘটনা সম্পর্কে জানাতে আজ বুধবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিবি যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলে আগে থেকেই মাস্ক পরে অবস্থান নেয় ডাকাত দলটি। পরে রাসেল ও জাহিদুল ঘটনাস্থলে এলে তাদের পথ রোধ করে। একজন জাহিদুলের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাঁর হাতে থাকা ব্যাগটি জোর করে ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে আরেক ডাকাত ফাঁকা গুলি করেন। একপর্যায়ে জাহিদুলের বাঁ পায়ের ঊরুতে চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। এ সময় জাহিদুল মাটিতে পড়ে গেলে ব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যান ডাকাত দলের সদস্যরা।

এ ঘটনায় জাহিদুল হক চৌধুরী মিরপুর মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন চক্রের মূল হোতা জলিল মোল্লা (৫২), মোস্তাফিজ (৫০), পলাশ (২৮), দিপু (৫০), সোহাগ (৩৫) ও জাফর (৩৩)। তাঁদের থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, তিনটি মোটরসাইকেল, ডাকাতির ৫ লাখ ৩ হাজার টাকা, বিভিন্ন দেশের ১০৬টি মুদ্রা, ২ লাখ ১২ হাজার টাকার জাল নোট, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, ‘এই চক্রের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন জেলখানায়। পরিচয়ের পর সখ্য হয়। তারপর থেকে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তাঁরা ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছেন। তাঁদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।’

ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস
ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে

মাইক্রোবাসের সূত্র ধরে গ্রেপ্তার

মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই ডিবির একাধিক টিম মাঠে নামে। তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি প্রথমে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস শনাক্ত করে। মাইক্রোবাসের চালক জাফরকে (৩৩) গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর ডাকাতির ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন। পরে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে অভিযান চালিয়ে বাকিদের করা হয়।

গ্রেপ্তারের সূত্র সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, মাইক্রোবাসটি ভাড়ায় নেন চালক জাফর। মাইক্রোবাসে করে ডাকাত দলের চার সদস্য ঘটনাস্থল থেকে দূরে অপেক্ষা করেন। পরে ডাকাতি করে আবার ওই মাইক্রোবাসে করে পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে সেখানকার বিভিন্ন পথের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করা হয়। মাইক্রোবাসের নম্বরপ্লেট ধরে চালককে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর চালকের তথ্য অনুযায়ী বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

দলটির ডাকাতির ধরন সম্পর্কে মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, এর আগে কামরাঙ্গীরচর চর, ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে ছিনতাইয়ের ঘটনায় এই চক্র জড়িত ছিল। ওই ঘটনায়ও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে দলটি।