এক আসামি কারাগারে, অন্যজন নিহত, সাজা হলো পলাতক হিসেবে

আলমগীর কবির (বাঁয়ে) ও দেলোয়ার হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীর ২০ বছর ধরে কারাগারে বন্দী। আরেক সন্ত্রাসী দেলোয়ার হোসেন ওরফে আজরাইল দেলোয়ার ১৭ বছর আগে মারা যান ‘বন্দুকযুদ্ধে’।

চট্টগ্রাম আদালতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অস্ত্র ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় গত ৩১ মে দুজনের ২০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে পলাতক আসামি হিসেবে। কারণ, পুলিশের খাতায় এখনো তাঁরা পলাতক।

আলমগীর ও দেলোয়ার চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী হিসেবে আলোচিত নাম। ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন খানের সহযোগী তাঁরা। দুই দশক আগের আলোচিত বহদ্দারহাটের আট খুন ও নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তাঁরা দুজন।

গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যায় সাজা সংশোধন করে তাঁকে ২০২০ সালে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আরও সাত মামলার আসামি তিনি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এম এ ফয়েজ প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে আদালতকে জানাবে পুলিশ। এখন পুলিশ কী উদ্দেশ্য নিয়ে এ ধরনের গাফিলতি করেছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

পুলিশ যথাযথভাবে তদন্ত না করায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই আসামি পলাতক হিসেবে রয়েছেন। তদন্ত গাফিলতিকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত
রেজাউল করিম, আইন উপদেষ্টা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট

২০০৫ সালে র‍্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান দেলোয়ার। আর আলমগীর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। এই কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন জানান, ২০০২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আলমগীর কারাবন্দী।

যে মামলায় পুলিশের গাফিলতি

২০০১ সালের ২ অক্টোবর নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীতে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি একে-৫৬ রাইফেলসহ সাজ্জাদ ও দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলাটি তদন্ত শেষে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেন ডিবি পুলিশের তৎকালীন এসআই কাজী এনায়েত কবির। এতে সাজ্জাদ, দেলোয়ার ও আলমগীরকে আসামি করা হয়।

এটি অনেক আগের ঘটনা। তারপরও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি
কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম মহানগর

আদালত সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশে ২০০৮ সালে অস্ত্র, পুলিশের ওপর হামলা ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী আইনে পৃথক অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। যখন এ অভিযোগপত্র দেওয়া হয়, তখন ছয় বছর ধরে কারাবন্দী আলমগীর। আর তিন বছর আগেই মারা গেছেন দেলোয়ার।

এ মামলায় ২০২১ সালেও আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বর্তমানে পিবিআই পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবির। তখনো তিনি আদালতকে বিষয়টি জানাননি। এ ব্যাপারে কাজী এনায়েত কবিরের দাবি, তাঁর কাছ থেকে কেউ জানতে চাননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি অনেক আগের ঘটনা। তারপরও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

কে এই আলমগীর ও দেলোয়ার

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর এলাকার ওমর ফারুক সিদ্দিকীর ছেলে আলমগীর। ২০০০ সালের ১২ জুলাই দুপুরে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে এলোপাতাড়ি গুলিতে ছয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ আটজন নিহতের মামলায় আসামি করা হয় তাঁকে। এরপর ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের জামালখান সড়কে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে খুনেও অংশ নেন আলমগীর। ওই দুটি মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড হয় তাঁর। পরে উচ্চ আদালতে আট খুনের মামলায় খালাস পান। আর গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যায় সাজা সংশোধন করে তাঁকে ২০২০ সালে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আরও সাত মামলার আসামি তিনি।

অন্যদিকে দেলোয়ার নগরের পাঁচলাইশ মির্জাপুল এলাকার বাসিন্দা। বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ছিল সাতটি।

আইনি সহায়তা দানকারী সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের আইন উপদেষ্টা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ যথাযথভাবে তদন্ত না করায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা ও বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই আসামি পলাতক হিসেবে রয়েছেন। তদন্ত গাফিলতিকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’