ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় ‘ব্যবহৃত অস্ত্র’ উদ্ধারের কথা জানাল র্যাব
যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছিল, সেটি উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র্যাব। মঙ্গলবার রাতে র্যাবের এক বার্তায় বলা হয়েছে, নরসিংদী জেলার সদর থানা এলাকার একটি বিলের পানির মধ্য থেকে ওই অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের দেওয়া তথ্যমতে, সেখান থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ১টি খেলনা পিস্তল ও ৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মো. ফয়সাল (২৫) নামে একজনকে আটক করা হয়েছে বলেও র্যাব জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদের শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদের (শিপু) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর ওই বিলে অভিযান চালানো হয় বলে র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে। ওয়াহিদ আহমেদের বাড়ি অর্থাৎ ফয়সল করিমের শ্বশুরবাড়ি নরসিংদী সদর থানা এলাকায়। গত রোববার ফয়সলের স্ত্রী পারভীন সামিয়া ও ওয়াহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে মঙ্গলবার রাতেই র্যাবের এক বিজ্ঞপ্তিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে ফয়সল করিমের বোনের বাসা ও পাশের ভবনের ফাঁকা স্থান থেকে ২টি ম্যাগাজিন, ১১টি গুলি এবং ১টি চাকু উদ্ধারের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র্যাব ফয়সলের বোনের বাসার আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ফয়সল করিম ও তাঁর সহযোগী আলমগীর ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে বিকেল ৪টার দিকে ফয়সল, আলমগীর এবং ফয়সলের মা ও ভাগিনাকে দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা স্থান থেকে কিছু বের করতে দেখা যায়। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে ফয়সল ও আলমগীর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে চলে যান।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার বেলা ২টা ২৪ মিনিটের দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত একটি মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার লক্ষ্যে প্রচার চালাচ্ছিলেন। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির অবস্থা সংকটজনক।
এ ঘটনার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, হামলার আগের রাতে ১১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) সাভারের একটি রিসোর্টে ছিলেন ফয়সল ও আলমগীর। ১২ ডিসেম্বর (শুক্রবার) সকালে সাভার থেকে একটি মোটরসাইকেলে তাঁরা ঢাকায় এসে আগারগাঁওয়ে ফয়সলের বোনের বাসায় ওঠেন। সেখান থেকে পুরানা পল্টন এলাকায় গিয়ে ওসমান হাদির ওপর হামলার পর আবার ওই বাসায় ফেরেন।
বিকেলে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে অটোরিকশায় করে আমিনবাজার যান তাঁরা। এরপর পাঁচ দফা যানবাহন পরিবর্তন করে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
ফয়সলের বাবা–মা গ্রেপ্তার
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার হাসনাবাদ হাউজিংয়ে অভিযান চালিয়ে ফয়সলের বাবা মো. হুমায়ুন কবির (৭০) ও মা মোসা. হাসি বেগমকে (৬০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাবের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফয়সল করিম এই দম্পতির তৃতীয় সন্তান। ফয়সাল প্রায়ই আগারগাঁওয়ে তাঁর বোনের বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন ফয়সল একটি ব্যাগ নিয়ে ওই বাসায় ওঠেন। পরে বাসার চিপা দিয়ে কালো রঙের ব্যাগটি ফেলে দেন আবার তাঁর ভাগনেকে দিয়ে নিয়ে আসেন। ফয়সল তাঁর ব্যবহৃত দুটি মোবাইলের একটি ওই বাসার ছাদ থেকে ফেলে দেন এবং অন্যটি তাঁর মা হাসি বেগমকে দেন। সেখানে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করেন। ফয়সল সেদিন ওই বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর হুমায়ুন কবির ও তাঁর স্ত্রী তাঁদের ছোট ছেলে হাসান মাহমুদ বাবলুর কেরানীগঞ্জের বাসায় আসেন এবং তাঁরা জুরাইন থেকে দুটি মোবাইল সিম কিনে ব্যবহার করছিলেন। এই দম্পতিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে র্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।