ঠাকুরগাঁওয়ে পাওয়া মুঠোফোনের সূত্রে বেরিয়ে এল নরসিংদীর হত্যাকাণ্ডের রহস্য

নরসিংদীর মাধবদী থেকে ৬ মার্চ মাসুম বিল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীতে নিজ বাড়িতে খুন হন এক ব্যক্তি। খোয়া যায় তাঁর মুঠোফোন ও মানিব্যাগ। চারজনের হাতবদল হয়ে মুঠোফোনটি ঠাকুরগাঁওয়ে সচল হয়। সেই মুঠোফোনের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের রহস্য।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে আজ রোববার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক এনায়েত হোসেন।

খুনের শিকার ব্যক্তির নাম নির্মল দেবনাথ। গত ১৪ নভেম্বর নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার নিজ বাড়িতে খুন হয় তিনি। এ ঘটনায় তাঁর ছেলে দুর্জয় দেবনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মাধবদী থানায় মামলা করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গত ৩১ ডিসেম্বর মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।

পিবিআই সূত্র জানায়, ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় নির্মল দেবনাথের স্ত্রী মনি দেবনাথ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়ে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাবার বাড়ি চলে যান। নির্মল মিষ্টির দোকানের কাজ শেষে রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন সকালে তাঁর স্ত্রী-সন্তানেরা বাড়ি ফিরে দেখেন, খাটের ওপর নির্মলের লাশ পড়ে আছে। কে বা কারা তাঁকে খুন করেছে।

আজ সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, মামলার তদন্তে নেমে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ভুক্তভোগী নির্মল দেবনাথের মুঠোফোনটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে জানা যায়, মুঠোফোনটি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থানা এলাকায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ১ মার্চ ঠাকুরগাঁও থেকে লাইলী খাতুন নামের একজনকে সেই মুঠোফোনসহ আটক করা হয়।

এনায়েত হোসেন বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে লাইলী জানান, মাধবদী এলাকায় চাকরি করার সময় শাকিল নামের এক ছেলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। শাকিল তাঁকে মুঠোফোনটি দিয়েছেন। পরে শাকিলকে নরসিংদী থেকে আটক করা হয়। শাকিল জিজ্ঞাসাবাদে জানান, রবিন নামের একজনের কাছ থেকে ২৫০ টাকায় মুঠোফোনটি কিনেছেন তিনি। একপর্যায়ে রবিনকে আটক করে পিবিআই।

সংবাদ সম্মেলনে এনায়েত হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রবিন জানান, মুঠোফোনটি তাঁর ফুফাতো ভাই মাসুম বিল্লাকে বিক্রির জন্য দেন। পরে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পিবিআই। ৬ মার্চ মাধবদী থেকে মাসুম বিল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার মাসুম বিল্লা জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেন।

মাসুম বিল্লার দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পিবিআইয়ের কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, ১৪ নভেম্বর রাত তিনটার দিকে নির্মল দেবনাথের বাড়িতে চুরি করতে যান মাসুম। ঘুমন্ত নির্মলের মুঠোফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে নেন মাসুম। একপর্যায়ে নির্মলের ঘুম ভেঙে গেলে তিনি বঁটি নিয়ে মাসুমকে ধাওয়া করেন। নিজেকে সামলে নিয়ে মাসুম ধরে ফেলেন নির্মলের হাত। এ সময় দুজনের মধ্যে প্রায় ২০ মিনিট ধস্তাধস্তি চলতে থাকে। পরে নির্মলের হাতে থাকা বঁটি কেড়ে নিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন মাসুম। এরপর মুঠোফোন ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।