তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন সৎবাবা

শিশু হত্যা
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর বনানীতে তিন বছরের শিশু তানজিনা আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন তার সৎবাবা মহিউদ্দিন আহমেদ। ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

সম্প্রতি মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে বনানী থানার পুলিশ। মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এ বিচারাধীন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, শিশু তানজিনাকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন মহিউদ্দিন। ঘটনার সময় শিশুর মা ঘরে ছিলেন না। পরে শিশুটির মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা নাটক সাজান মহিউদ্দিন। সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রথমে দাবি করেছিলেন তিনি।

পুলিশের অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বনানীর কড়াইল বেলতলা এলাকার ভাড়া বাসায় শিশু তানজিনাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তানজিনার মা বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলা করেন। তানজিনাকে হত্যার অভিযোগে তার সৎবাবা মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তানজিনাকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন মহিউদ্দিন। তবে তিনি জবানবন্দিতে শিশুটিকে ধর্ষণের কথা এড়িয়ে যান। কিন্তু ফরেনসিক পরীক্ষায় শিশুটিকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে উঠে এসেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক প্রদীপ বিশ্বাস ফরেনসিক প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

পরিবার, পুলিশ ও মামলার নথি থেকে জানা যায়, তানজিনা হত্যার সাত মাস আগে তার মা–বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তানজিনার মায়ের বাড়ি হবিগঞ্জ। তাঁর প্রথম সংসারে তানজিনা ছাড়া দুই ছেলেসন্তান আছে।

বিবাহবিচ্ছেদের পর মুঠোফোনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা মহিউদ্দিনের সঙ্গে তানজিনার মায়ের পরিচয় হয়। পরে তাঁরা বিয়ে করেন।

বিয়ের পর তানজিনাকে সঙ্গে নিয়ে তার মা ঢাকায় চলে আসেন। তিনি বনানীর কড়াইল বেলতলা এলাকায় মহিউদ্দিনের ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন।

তানজিনার মা একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তাঁর স্বামী মহিউদ্দিন একটি হোটেলে কাজ করেন। তবে তিনি ঠিকমতো কাজ করতেন না। সংসারের খরচ ঠিকমতো দিতেন না তিনি। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো।

ঘটনার দিন সকালে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার পর স্ত্রী তাঁর মাদারীপুরে থাকা এক আত্মীয়ের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। মেয়ে তানজিনা ঢাকার বাসায় থাকে। বেলা ১১টার দিকে তানজিনার খোঁজখবর নিতে মহিউদ্দিনকে ফোন করেন তাঁর স্ত্রী। তখন স্ত্রীকে মহিউদ্দিন জানান, তানজিনা সিঁড়ি থেকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।

খবর পেয়ে তানজিনার মা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তাঁর মেয়ে তানজিনার লাশ দেখতে পান।

মামলার আলামত হিসেবে তানজিনার রক্তমাখা জামা, হাফপ্যান্ট, বিছানার চাদর ও সাদা রঙের একটি লেপ জব্দ করে পুলিশ। মামলায় মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তানজিনাকে হত্যার কথা স্বীকার করে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন।

মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তানজিনাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন মহিউদ্দিন। কিন্তু শিশুটিকে হত্যার আগে ধর্ষণের কথা তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। তবে ফরেনসিক পরীক্ষায় শিশুটিকে ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে।