তিনবার তিন নামে জেলে একই ব্যক্তি

চুরির মামলায় সাদ্দাম, মাদকে সুমন ও অস্ত্র মামলায় শাহ আলম পরিচয়। তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে এই কৌশল।

প্রতীকী ছবি

তিন মামলায় তিনবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। তিনবারই ভিন্ন ভিন্ন নাম-ঠিকানা দেন। অবশেষে ধরা পড়েন ৩০ বছর বয়সী এই যুবক। চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি লিখিতভাবে গত বৃহস্পতিবার আদালতকে জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, কারাগারে নতুন বন্দী এলে তাঁর আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হতে হয়। আঙুলের ছাপে উঠে আসে ওই আসামি কারাগারে তিনবার এসেছেন ভিন্ন ভিন্ন নামে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তাঁর আসল পরিচয় জানা যায়নি।

গ্রেপ্তারের পর সম্ভব না হলে তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে অবশ্যই সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাই করা উচিত।
আবদুর রশিদ, সরকারি কৌঁসুলি, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত

আইনজীবীরা জানান, গ্রেপ্তার এড়াতে কিংবা সাজামুক্ত থাকতে অনেকেই ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করছেন। নাম–ঠিকানা ভুল থাকলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট আসামিকে খুঁজে পায় না। এর ফলে তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম’। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তথ্যভান্ডারে ওই আসামির নাম–ঠিকানা সংরক্ষিত নেই।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর দেখা যায়, আসামি তিনবার তিনটি মামলায় কারাগারে এসেছেন। প্রথমবার সাদ্দাম হোসেন, দ্বিতীয়বার মো. সুমন ও তৃতীয়বার মো. শাহ আলম পরিচয়ে কারাগারে আসেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক জানিয়েছেন, তাঁর প্রকৃত নাম শাহ আলম। তাঁর দেওয়া দুটি নাম-ঠিকানা ভুয়া।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে আঙুলের ছাপ নেওয়া পদ্ধতি ব্যবহার করতে শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত টাকার বিনিময়ে একজনের হয়ে আরেকজন কারাবরণ করতে যাওয়া ২০ জনকে আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, নগরের পাঁচলাইশ কাতালগঞ্জ এলাকায় ২০১৭ সালের ২৮ জুন একটি বাসায় চুরির মামলায় পরের বছরের ২০ আগস্ট সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি এ মামলায় জামিনে মুক্তি পান। এ মামলায় সাদ্দামসহ ছয় আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় চলতি বছরের শুরুতে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই রানা প্রতাপ দাশ বলেন, কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার মৃত মো. হাকিমের ছেলে পরিচয় দেন সাদ্দাম। যেহেতু এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি, তাই আসামির নাম–ঠিকানা যাচাই করা হয়নি।

গ্রেপ্তারের পর সম্ভব না হলে তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে অবশ্যই সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাই করা উচিত।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুর রশিদ

এক কেজি গাঁজাসহ ওই একই ব্যক্তি নগরের কোতোয়ালি গোয়ালপাড়া থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসেন ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর। তখন নিজেকে পরিচয় দেন কুমিল্লা লাকসাম থানার মৃত হাকিমের ছেলে মো. সুমন। তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই আফরোজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আসামি ভাসমান হওয়ায় যে নাম–ঠিকানা বলেছে সেই ঠিকানায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর দেখা যায়, আসামি তিনবার তিনটি মামলায় কারাগারে এসেছেন। প্রথমবার সাদ্দাম হোসেন, দ্বিতীয়বার মো. সুমন ও তৃতীয়বার মো. শাহ আলম পরিচয়ে কারাগারে আসেন।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন

এ মামলায় গত মাসের ১৫ মে সুমন জামিনে মুক্তি পান কারাগার থেকে। এর পাঁচ দিনের মাথায় আবার গ্রেপ্তার হয়ে ২০ মে কারাগারে আসেন এই যুবক। নিজেকে পরিচয় দেন চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার ভাসমান মৃত আবদুর রবের ছেলে শাহ আলম। ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি থানার একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর সম্ভব না হলে তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে অবশ্যই সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাই করা উচিত।