ছোটখাটো অপরাধে ‘ঠিকানা’ কারাগার নয়

কোনো অপরাধীকে প্রাপ্য শাস্তি না দিয়ে, কারাবন্দী না রেখে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ দিতে পারেন আদালত।

কারাগারে না পাঠিয়েও সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে সংশোধনের সুযোগ দিতে পারেন আদালত। ছোটখাটো কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে আইনে এই সুযোগ থাকলেও এর প্রয়োগ এত দিন খুব একটা দেখা যেত না।

তবে গত তিন–চার বছরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। গত জুলাই মাসে সুনামগঞ্জ আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্ত দেশজুড়ে বেশ আলোচিত হয়েছে। ছোটখাটো বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়া ৬৫ শিশু-কিশোরকে ছয়টি শর্তে পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। একইভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছোটখাটো অপরাধের ঘটনায় দণ্ডিত আসামিকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুক্তজীবনে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন আদালত। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ব্যবস্থা সমাজে অপরাধপ্রবণতা কমাতে সহায়ক হবে।

প্রতিদিন অন্তত দুটি ভালো কাজ করা ও ডায়েরিতে লিখে রাখা, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা, গাছ লাগানো—এ রকম ছয়টি শর্ত সুনামগঞ্জের ৬৫ শিশু-কিশোর এখন মুক্ত জীবনযাপনের সুযোগ পাচ্ছে, যা আইনের ভাষায় প্রবেশন নামে পরিচিত। কারাগারের ওপর চাপ কমানো এবং ‘সংশোধনমূলক’ সাজার নীতি প্রয়োগে ‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্সের বিধান অনুসরণ করতে অধস্তন আদালতে বিচারকদের প্রতি ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্দেশনা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

রায়ে আপিল বিভাগে বলেছেন, ‘দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে বিচারিক আদালতের বিচারক ও আপিল আদালতের বিচারক সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেছেন যে আমাদের দেশে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ নামে একটি আইন আছে। বর্তমান মামলার প্রেক্ষাপটে সেই আইনের ৫ ধারা প্রয়োগযোগ্য।

কোনো অপরাধীকে প্রাপ্য শাস্তি না দিয়ে (স্থগিত রেখে), কারাবন্দী না রেখে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ দেওয়াই হচ্ছে ‘প্রবেশন’। এই ব্যবস্থায় প্রথমবার অপরাধে জড়ানো বা লঘু অপরাধে আইনের সঙ্গে সংঘর্ষে বা সংস্পর্শে আসা শিশু-কিশোরেরা আদালতের নির্দেশে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে এবং শর্ত সাপেক্ষে পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ পায়।

একই সঙ্গে সামাজিক পরিবেশে থেকে কৃত অপরাধের সংশোধন এবং সামাজিকভাবে একীভূতকরণের সুযোগ দেওয়া হয়। এই ব্যবস্থা প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রেও (লঘু অপরাধ বা প্রথমবার কোনো ছোটখাটো অপরাধে জড়ানো) প্রযোজ্য। উল্লেখ্য, প্রবেশন কর্মকর্তার পদটি সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ১৬৬ জনকে এবং ২০১৮ সালে ১৭১ জনকে বিভিন্ন আদালত ‘প্রবেশনে’ পাঠিয়েছেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮০ জনকে প্রবেশন দেওয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবেশনারের সংখ্যা ১ হাজার ৫৩৫। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রবেশনে পাঠানো হয় ৩ হাজার ৪১১ জনকে। আর চলতি বছরের জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮৭০ জনকে প্রবেশনে পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে গত আগস্ট পর্যন্ত প্রবেশনারের (শর্তে মুক্ত থাকা) সংখ্যা ৫ হাজার ৪৫০।

আপিল বিভাগে রায়ে প্রবেশনের ওপর গুরুত্ব

‘নুর মোহাম্মদ বনাম সরকার এবং অন্যান্য’ শীর্ষক এক মামলায় গত বছরের ২৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে ১৯৬০ সালের দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্সের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, বাংলাদেশে ৬২ শতাংশের বেশি লোক গ্রামাঞ্চলে বাস করে। যেখানে মানুষের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক শহরের তুলনায় বেশি এবং তাদের মধ্যে ছোটখাটো ঝগড়াবিবাদও বেশি হয়।

রায়ে আপিল বিভাগে বলেছেন, ‘দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে যে বিচারিক আদালতের বিচারক ও আপিল আদালতের বিচারক সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেছেন যে আমাদের দেশে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স, ১৯৬০ নামে একটি আইন আছে। বর্তমান মামলার প্রেক্ষাপটে সেই আইনের ৫ ধারা প্রয়োগযোগ্য।

মামলার বিষয়বস্তু থেকে প্রতীয়মান হয় যে এ ঘটনা ঘটেছিল দুই প্রতিবেশীর মধ্যে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে। এসব ক্ষেত্রে আসামিকে এক বছরের জন্য জেলে না পাঠিয়ে প্রবেশনে রাখা সমীচীন ছিল। যেহেতু দণ্ডিবিধির ৩২৩ ও ৩২৫ ধারা আপসযোগ্য অপরাধ এবং দুই পক্ষ হচ্ছে পরস্পর আত্মীয়/প্রতিবেশী। কাজেই মামলাটি আপস–মীমাংসা যুক্তিযুক্ত ছিল।’

প্রবেশন কর্মকর্তার অভাব

প্রবেশনারের (প্রবেশন সুবিধাভোগী) সংখ্যা বাড়তে থাকলেও তাঁদের তত্ত্বাবধানে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এখন মাত্র ৭০ জন প্রবেশন কর্মকর্তা আছেন।

এর বাইরে গাজীপুর এবং যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে দুজন প্রবেশন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। এত অল্পসংখ্যক প্রবেশন কর্মকর্তা দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তজীবনে আসা শিশু–কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের তত্ত্বাবধান করা কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, শহর সমাজসেবা কর্মকর্তাকেও এখন প্রবেশন কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চিকিৎসা ও প্রবেশন) লামিয়া ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রবেশন কর্মকর্তার নতুন পদ সৃজনের কাজ চলছে।

একটি মামলায় ২৬টি শর্ত

সাত বছর আগের মারামারির এক মামলায় গত ৮ আগস্ট মৌলভীবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দুই আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে পাঠানোর পরিবর্তে ২৬টি শর্তে এক বছরের জন্য প্রবেশন দেন। শর্তের মধ্যে রয়েছে ১০০টি গাছ রোপণ, নতুন করে কোনো অপরাধে জড়িত না হওয়া, মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা, আদালতে নির্ধারিত তারিখে হাজির হওয়া, শান্তি রক্ষা, সদাচরণ করাসহ ২৬টি শর্তে এক বছরের জন্য প্রবেশন দেন। প্রবেশন পাওয়া দুজন হলেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার কবির আহমদ ও মুহিবুর রহমান।

আদালত আদেশে বলেছেন, উল্লিখিত যেকোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজেদের সংশোধন করতে সক্ষম না হলে তাঁদের (কবির ও মুহিবুর) প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে এবং প্রমাণিত অপরাধের দায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হবে।

প্রবেশনকাল সফলভাবে সমাপ্ত হওয়া সাপেক্ষে তাঁদের মামলা থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেওয়া হবে। আদেশের শর্ত পালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রবেশন কর্মকর্তাকে তিন মাস পর পর প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

কবির ও মুহিবুরের তত্ত্বাবধানে থাকা মৌলভীবাজার সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা (দায়িত্বরত প্রবেশন কর্মকর্তা) সুমন দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, দুজনই আদালতের দেওয়া শর্ত মেনে চলছেন। নিয়মিত তদারকি করা হয়। নির্ধারিত সময়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

ট্রাকমালিক কবির আহমদ ১০ অক্টোবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের আদেশ আমাদের ভালোর জন্য। শর্তগুলো যথাযথভাবে পালন করব।’

ঘরে থেকে শর্ত পূরণ, বাড়ছে মুক্তি

শুধু কবির ও মুহিবুরই নন—দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্সের আওতায় দোষী সাব্যস্ত লঘুদণ্ডিত অনেকে কারাগারের পরিবর্তে সংশোধনের জন্য ঘরে থেকে শর্ত সাপক্ষে মুক্তজীবনে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবেশন শেষে ৮৭৬ জন মুক্তি পেয়েছেন। আর চলতি বছরের জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রবেশন শেষে ২৭৩ জন মুক্তি পেয়েছেন।

৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ মায়ের যত্ন নেওয়া, দুই সন্তানের লেখাপড়া চালানো ও আইনে নির্ধারিত বয়সের আগে কন্যাসন্তানের বিয়ে না দেওয়া—এসব শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় দণ্ডিত কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মতি মাতবর এখন মুক্ত জীবন যাপন করছেন। ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট এক রায়ে তাঁকে দেড় বছরের জন্য প্রবেশন দেন। ঢাকা জেলার প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে কারাগারের পরিবর্তে দেড় বছর তিনি পরিবারের সঙ্গে থাকবেন রায়ে বলা হয়।

ঢাকা জেলার প্রবেশন কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর মতি মাতবরের শর্ত পালন বিষয়ে তিন মাস পর পর নিম্ন আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রবেশনের মেয়াদ তিনি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন বলে ঢাকার যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালতে গত ১৫ জুন প্রতিবেদন দেওয়া হয়। বিষয়টি এখন আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রবেশনের উদ্দেশ্য

১৯৬০ সালের ওই আইনের বিধান অনুসারে পূর্বে দণ্ডিত হননি—এমন কোনো ব্যক্তির অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে এ রকম কোনো অপরাধ করে থাকলে এবং দণ্ডিত হলে আদালত অপরাধীর বয়স, স্বভাব-চরিত্র, পরিচয় অথবা শারীরিক-মানসিক অবস্থা, অপরাধের ধরন অথবা অপরাধ সংঘটনে শাস্তি লাঘবকারী পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে পারেন। আদালত যদি মনে করেন যে দণ্ড না দিয়ে সতর্ক করে এবং সদাচরণ করার শর্তে জামিনদারসহ বা জামিনদার ছাড়া মুচলেকা নিয়ে মুক্তির আদেশ দিতে পারেন।

‘উন্নয়ন এবং বাংলাদেশে প্রবেশন পদ্ধতি’ নিয়ে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা প্যানাল রিফর্ম ইন্টারন্যাশনাল একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০১৩ সালে প্রকাশ করেছিল।

বাংলাদেশে প্রবেশনব্যবস্থার ক্রমবিকাশ ও ব্যবহারের রূপরেখা প্রণয়নের লক্ষ্যে ওই সমীক্ষা করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রবেশনের উদ্দেশ্য হলো অপরাধ প্রতিরোধ ও অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধের পাশাপাশি অপরাধীকে পুনর্বাসন, সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনা ও দোষারোপ না করা। প্রবেশন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে অপরাধীর বয়স ও লিঙ্গভেদে ভিন্নতা রয়েছে। অপরাধের প্রকৃতি যা–ই হোক না কেন, সব শিশুই প্রবেশন পাওয়ার অধিকারী।

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধ ব্যতীত অন্য সব অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত একজন নারীকে প্রবেশন মঞ্জুর করা যেতে পারে। তবে প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্সে উল্লিখিত সুনির্দিষ্ট কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীকে প্রবেশন প্রদান করা যেতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালত সাধারণত অপরাধীর বয়স, চরিত্র, অপরাধের পূর্ব ইতিহাস, শারীরিক বা মানসিক অবস্থা ও অপরাধের প্রকৃতি বিবেচনা করেন।

সমীক্ষার সুপারিশে বলা হয়, প্রবেশন সার্ভিসের জন্য পৃথক কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই। সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় যে বাজেট রয়েছে, তা খুবই কম। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক প্রবেশনারদের তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে প্রবেশন কর্মকর্তাদের বিশেষ দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। প্রবেশনব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন সমাজসেবা অধিদপ্তর, জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসে তদারকি ও তত্ত্বাবধান বৃদ্ধি করা।

প্রবেশনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত অংশীজন যেমন বিচারক, প্রবেশন কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, কারা কর্মকর্তা, আইনজীবী এবং সমাজসেবা কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত কার্যক্রম নেওয়া প্রয়োজন। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, প্রবেশনারদের তত্ত্বাবধান এবং তদারকি করার ক্ষেত্রে প্রবেশন কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির ওপর নির্ভর করে থাকেন।

এ জন্য প্রবেশন ও পুনর্বাসনের প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক প্রবেশনারদের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তাদের পৃথকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা প্রয়োজন। অর্থাৎ শিশুদের তত্ত্বাবধান করার জন্য কিছু প্রবেশন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, যাঁদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্না প্রথম আলোকে বলেন, ৬২ বছর আগে আইনটি হলেও এর কার্যকর প্রয়োগ দেখা যাচ্ছিল না। ইদানীং প্রবেশনে পাঠানোর সংখ্যা বাড়ছে, যা ইতিবাচক। এখন লঘু অপরাধে দণ্ডিত, প্রথমবার সাজাপ্রাপ্ত এবং যাঁদের অতীত রেকর্ড ভালো—এমন আসামিকে প্রবেশনে পাঠানো হচ্ছে।

যদিও ইউরোপের দেশগুলোতে যাবজ্জীবন দণ্ডিতদেরও প্রবেশনে পাঠানো হয়। কেননা শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠালেই অপরাধ কমানো যায় না, বরং সংশোধনের মাধ্যমে অপরাধের সংখ্যা কমে যা প্রমাণিত সত্য। প্রবেশনকালে শর্ত পূরণের মাধ্যমে একজন আসামি নিজে সংশোধন হওয়ার সুযোগ পান।

প্রবেশনের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সমাজে অপরাধের সংখ্যা কমার ইতিবাচক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্রবেশন সফলভাবে শেষে মুক্তি পেয়ে সংশ্লিষ্ট আসামি বা ব্যক্তি আবার অপরাধে জড়াচ্ছেন কি না, সে জন্য তদারকির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।