অর্থ পাচার মামলায় পাপিয়ার বিচার শুরু

শামীমা নূর পাপিয়া
ফাইল ছবি

অর্থ পাচার মামলায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর ওরফে পাপিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত- ৮-এর বিচারক বদরুল আলম ভূঞা আজ রোববার এই আদেশ দেন।

মামলার অভিযুক্ত অপর চার আসামি হলেন পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী, পাপিয়ার সহযোগী সাব্বির খন্দকার, শেখ তায়িবা নূর ও জুবায়ের আলম। অভিযোগ গঠনের আগে পাঁচজনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। অভিযোগ গঠনের সময় নিজেদের নিরপরাধ দাবি করেন তাঁরা। প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাপিয়ার আইনজীবী শাখাওয়াত উল্লাহ ভূইয়া।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন মফিজুর ও পাপিয়া। অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে একই বছরের ১২ অক্টোবর দুজনকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি মামলায় মফিজুর ও পাপিয়ার বিচার চলছে।

অর্থ পাচার মামলায় গত বছরের ডিসেম্বরে পাপিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেখানে বলা হয়, নরসিংদী সরকারি কলেজে পড়ার সময় পাপিয়ার সঙ্গে মফিজুরের সম্পর্ক হয়। পরে তাঁরা বিয়ে করেন। একপর্যায়ে পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। অবশ্য গ্রেপ্তারের পর পাপিয়াকে যুব মহিলা লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

আদালতে সিআইডির দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ বছরের ব্যবধানে অবৈধভাবে ৫ কোটি টাকার মালিক হন মফিজুর। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, হুমকি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ওই টাকা অর্জন করেন তিনি।

মফিজুর সিআইডির কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, অবৈধভাবে অর্থ আয় করায় দুদক মামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করতেন তিনি। তাই টাকা ব্যাংকে না রেখে নিজের কাছে রাখতেন। কিন্তু বিয়ের পর তাঁর টাকা দেদার খরচ করতেন স্ত্রী পাপিয়া। এর পর থেকে মফিজুর তাঁর টাকার তথ্য গোপন রাখতেন।

মফিজুর জবানবন্দিতে আরও বলেন, পাপিয়া যখন বাসায় থাকতেন না, তখন ব্যাগে করে টাকা বাসায় নিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখতেন তিনি। এভাবে তিনি বাসার খাটের নিচে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা জমা রাখেন। এ টাকার পুরোটাই ছিল অবৈধ।

১৯৯৬ সালে স্থানীয় পৌর কমিশনার মানিক মিয়া খুন হন। ওই খুনের ঘটনায় মফিজুরকে আসামি করা হয়। এর পর থেকে তিনি সব সময় নিজের কাছে অবৈধ পিস্তল রাখতেন বলে জবানবন্দিতে সিআইডিকে জানিয়েছেন মফিজুর।

পরে ২০১১ সালে নরসিংদী পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেন খুন হলে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে মফিজুর শঙ্কায় পড়েন। সিআইডিকে তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালে তাঁর মনে হয়, তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। তখন তিনি ভারতে চলে যান। এরপর বাসায় মফিজুরের রেখে দেওয়া টাকার কথা জানতে পারেন পাপিয়া।

অর্থ পাচার মামলায় ১৬১ ধারার জবানবন্দি দিয়েছেন পাপিয়া। তাঁর জবানবন্দির তথ্য বলছে, ২০১১ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। পরে তিনি জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এ পদ পাওয়ার পর ২০১৫ সালে কেএমসি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খোলেন। একপর্যায়ে পাপিয়া পদ-বাণিজ্য, তদবির-বাণিজ্য, চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িত হন। তাঁকে এ কাজে সহযোগিতা করেন স্বামী মফিজুর।

মফিজুর-পাপিয়া দম্পতি ঢাকার তেজগাঁওয়ে কার এক্সচেঞ্জ নামের প্রতিষ্ঠানে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। নরসিংদীতে কেএমসি এন্টারপ্রাইজ ও কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড সল্যুশন নামের প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

পাপিয়ার জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০১৯ সালের অক্টোবরে তাঁর স্বামী মফিজুর ভারতে যান। এরপর বাসা পরিষ্কার করতে গিয়ে বক্স খাটের ভেতরে অনেক টাকা দেখতে পান। ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট গুনে তিনি মোট ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পান।

পরে পাপিয়া ঢাকার অভিজাত একটি হোটেলে কক্ষ ভাড়া নেন। সেখানে তিনি কয়েক মাস অবস্থান করেন। ভাড়াসহ তাঁর বিল আসে ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তিনি এই টাকা নগদ অর্থে পরিশোধ করেন।

আরও পড়ুন