ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা, আছেন দুই প্রকৌশলীও

প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে প্রতারণা করতে ফেসবুকে এ রকম পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হত
প্রতারক চক্রের ফেসবুক পেজের স্ক্রিনশট

এইচএসসি পরীক্ষা এলেই ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিজ্ঞাপন দেন তাঁরা। বিজ্ঞাপন দেখে কোনো শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা আগ্রহী হলে টাকা নিয়ে পেজে যুক্ত করা হয় তাঁকে। পরীক্ষার আগে শতভাগ নিশ্চয়তাসহ প্রশ্ন দেওয়ার কথা বলে আরেক দফায় নেওয়া হয় টাকা। টাকা নেওয়ার পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দেওয়া হয় ভুয়া প্রশ্ন। চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে এভাবে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছে চক্রটি।

গত মঙ্গল ও বুধবার ঢাকা, নারায়গঞ্জ ও জামালপুর এলাকা থেকে এই চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁরা হলেন আবদুল আহাদ ওরফে রাফিন খান, স্বাগতম চন্দ্র ওরফে মো. বাবুল মিয়া, সাব্বির আহমেদ, মইনুদ্দিন ও বাসুদেব চন্দ্র রায়। তাঁদের মধ্যে সাব্বির কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে এবং স্বাগতম রংপুরের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন।  

ডিবি বলছে, দুই ডিপ্লোমা প্রকৌশলী চাকরি না করে দুই বছর আগে এই চক্র গড়ে তোলেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের সদস্য রয়েছেন। দুই বছর ধরে তাঁরা এভাবে ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছেন। তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে প্রতারণা ছাড়াও বছরজুড়ে অনলাইন জুয়া ও ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার (ক্রিপ্টোকারেন্সি) কারবার করেন।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে মানুষকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। ঘরে বসে আয়, অ্যাপের মাধ্যমে বিনা জামানতে ঋণ দেওয়া ও অল্প টাকা বিনিয়োগে লোভনীয় লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলেও হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে দেশি-বিদেশি চক্র।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘এইচএসসি সকল বোর্ডের প্রশ্নফাঁস ২০২৩,’ ও ‘এইচএসসি প্রশ্ন উত্তর ২০২৩’–সহ এ ধরনের নামে ছয়টি ফেসবুক পেজ খুলে বিজ্ঞাপন দেয় চক্রটি। এই বিজ্ঞাপন দেখে তদন্ত শুরু করে ডিবির লালবাগ বিভাগ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিজ্ঞাপন ও অনলাইন জুয়ার কাজে ব্যবহৃত সাতটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, কয়েক সেট ভুয়া প্রশ্নপত্র, ফেসবুক পেজে প্রশ্নপত্র ফাঁস–সংক্রান্ত আলাপচারিতা উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বাড্ডা ও দারুস সালাম থানায় দুটি মামলা হয়েছে।

ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০২১ সাল থেকে এই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের নামে প্রতারণা করে আসছিলেন। ফেসবুকে শতভাগ প্রশ্নপত্র ফাঁসের নিশ্চয়তা দিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। যাঁরা বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী হতেন, তাঁদের কাছ থেকে মুঠোফোনে আর্থিক সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা নিতেন।

ডিবি জানায়, স্বাগতম চন্দ্র গ্রেপ্তার এড়াতে ফেসবুকে মো. বাবুল মিয়াসহ এক ডজন ছদ্মনামে এসব অপরাধ করে আসছিলেন। অন্যদের মধ্যে আবদুল আহাদ মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের স্নাতকের ছাত্র। সাব্বির আহমেদ জামালপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করে অনলাইন জুয়া চালাতেন। মইনুদ্দিন নারায়ণগঞ্জ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। আর বাসুদেব চন্দ্র রায় স্বাগতম চন্দ্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।

ডিবির ভাষ্য, এই চক্রের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ভার্চ্যুয়ালি মুদ্রা লেনদেনে জড়িত ব্যক্তিদের যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে অনলাইনে জুয়া ছাড়াও মাদক কেনাবেচা করতেন।