‘দরবেশ’ পরিচয়ে কথা বলে চিকিৎসকের কাছ থেকে নিলেন ২৫ লাখ টাকা

রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। ১৯ ফেব্রুয়ারিছবি: প্রথম আলো

পারিবারিক সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ‘দরবেশ’ পরিচয় দিয়ে এক নারী চিকিৎসকের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন এক ব্যক্তি। কিন্তু ওই চিকিৎসকের পারিবারিক সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে গত বছরের ৭ নভেম্বর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন ওই চিকিৎসক।

ওই মামলার তদন্তের সূত্র ধরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রতারক চক্রের প্রধান আশিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল রোববার মাগুরা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের আরও ১৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া।

মোহাম্মদ আলী বলেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিতেন চক্রের সদস্যরা। সেই বিজ্ঞাপনে লটারি পাইয়ে দেওয়া, ভাগ্যবদল, পাওনা টাকা আদায়, মামলায় জেতানো, পারিবারিক সমস্যা সমাধানের কথা বলা হতো। আধ্যাত্মিক ও তান্ত্রিক ক্ষমতাবলে বিপদগ্রস্ত মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারবে—এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করা হতো।

সিআইডির প্রধান বলেন, ‘দরবেশ বাবা’ পরিচয়দানকারী চক্রের সদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বাসাভাড়া নিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে তাঁরা দুটি কৌশল নিতেন। তাঁরা দৈবচয়নের মাধ্যমে বা ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত অথবা অর্থ সম্পদশালী ব্যক্তিদের দারোয়ান বা গাড়িচালকদের সঙ্গে সম্পর্ক করতেন।

মোহাম্মদ আলী বলেন, পরে ওই চালক ও দারোয়ানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিবারের গোপন তথ্য সংগ্রহ করতেন। তাঁদের কাছ থেকে ‘টাগেট’ পরিবারের নানা সমস্যা কৌশলে জেনে বাড়ির মালিক ও তাঁর স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করতেন। এরপর শুরু করতেন প্রতারণা। স্ত্রীর কাছে স্বামীর বদনাম এবং স্বামীর কাছে স্ত্রীর বদনাম করে ঝামেলা তৈরি করতেন। তখন তাঁদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হতো। এরপর ‘দরবেশ’ পরিচয়ে চক্রের আরেক সদস্য কল করে সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দিতেন।

সিআইডিপ্রধান বলেন, এভাবেই চক্রটি পারিবারিক সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে এক নারী ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ‘দরবেশ বাবা’ পরিচয়ে কয়েক ধাপে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করত প্রতারক চক্র।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সিআইডিকে বলেছেন, ২০২০-২১ সাল থেকে তাঁরা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। প্রথম দিকে তাঁরা বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতেন। পরে তাঁরা পত্রিকা ও বিভিন্ন চ্যানেলের পাশাপাশি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন। ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের নামে ভয়ভীতি ও নানা প্রলোভন দেখিয়ে মুঠোফোনে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) নম্বরে টাকা নিতেন তাঁরা।

সিআইডি বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৪১টি মুঠোফোন, বিপুলসংখ্যক সিমকার্ড ও ডিজিটাল আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।