অনুমোদন ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনায় ১৪ জন গ্রেপ্তার
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে দেশে হাজারের বেশি মানি এক্সচেঞ্জ অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বৈধ-অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বাইরে কিছু ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে ঘুরে ঘুরে অবৈধভাবে বেচাকেনা করছেন দেশি-বিদেশি মুদ্রা। এতে জড়িত অভিযোগে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি)।
আজ বুধবার মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহযোগিতায় সিআইডির একাধিক দল গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান-১, মোহাম্মদপুর, রিংরোড ও উত্তরার আশকোনার এবি মার্কেট ও চায়না মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন আবু তালহা ওরফে তাহারত ইসলাম তোহা (৩২), আছাদুল শেখ (৩২), হাছান মোল্যা (১৯), আবদুল কুদ্দুস (২৪), হাসনাত এ চৌধুরী (৪৬), শামসুল হুদা চৌধুরী ওরফে রিপন (৪০), সুমন মিয়া (৩০), তপন কুমার দাস (৪৫), আবদুল কুদ্দুস (৩২), কামরুজ্জামান রাসেল (৩৭), মনিরুজ্জামান (৪০), নেওয়াজ বিশ্বাস, আবুল হাসনাত (৪০) ও শাহজাহান সরকার (৪৫)।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন তিনটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে জড়িত। বাকিরা ভ্রাম্যমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রেতা। অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জগুলো হলো গুলশানের জে এম সি এইচ প্রাইভেট লিমিটেড, মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং উত্তরার আশকোনা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের তৈমুর মানি এক্সচেঞ্জ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১ কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৬ টাকা মূল্যের ১৯টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রাসহ মোট ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৬ টাকা জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজস্ব অফিস এবং ভ্রাম্যমাণ যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি (লাইসেন্স) ছাড়াই বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনা করে আসছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুযায়ী মামলার প্রক্রিয়া চলমান।
সিআইডির প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, সারা দেশে এক হাজারের বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ রয়েছে। তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ। অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডির অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানের কারণে অনেকে অবৈধ প্রতিষ্ঠান বা অফিস গুটিয়ে এখন কাঁধে-ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে ঘুরে ফোনে ফোনে যোগাযোগ করে ব্যবসা করছেন। যাঁর যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা প্রয়োজন, সে অনুযায়ী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিনিময়ে ডলার বা অন্য বিদেশি মুদ্রার ন্যায্যমূল্যের তুলনায় বেশি টাকা নিচ্ছেন।
সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘যখন কোনো কাজে বা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন, তার আগে কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। ভিসা পাওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকে পাসপোর্ট দেখালে বিদেশি মুদ্রা পাবেন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তা দিতে বাধ্য। তাহলে কেন তাঁরা অবৈধভাবে ১০০ টাকার ডলার ১১৫ বা ১২০ টাকায় ক্রয় করবেন! এটা অন্যায় ও অবৈধ। আমরা এ অবৈধ কাজকে উৎসাহিত করতে পারি না। লাগবেই যখন-তখন বৈধভাবে নেব, ব্যাংক কিংবা বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থেকে নেব। তাহলে ফুলে-ফেঁপে ওঠা এসব অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাবে।’
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা টাকা বা ডলার পাচার কিংবা হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির প্রধান বলেন, অল্প সময়ে স্বল্প পুঁজিতে বেশি আয়ের আশায় অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জগুলো তৈরি হচ্ছে। অভিযানে অবৈধ পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের মধ্যে তিনটির অফিস থাকলেও বাকি দুটি প্রতারণামূলক বা ফেরারি। তাঁরা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানি এক্সচেঞ্জ করতেন।