টিপু কিবরিয়া যে ছেলেশিশুদের ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও বানাতেন, সে শিশুদের জোগাড় করে দিত তাঁর সহযোগী কামরুল ইসলাম। এ জন্য তাঁকে মাথাপিছু ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দিতেন। এর আগেও তিনি ছেলেশিশুদের নগ্ন ছবি জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে দুই বন্ধুর কাছে ৩০০ থেকে ৪০০ ডলারে বিক্রি করেছেন।
গত ২৬ এপ্রিল আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে টি আই ফখরুজ্জামান ওরফে টিপু কিবরিয়া এসব তথ্য দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। তিনি সেই জবানবন্দিতে আরও বলেন, ছেলেশিশুদের নগ্ন ছবি তুলতে তিনি পছন্দ করেন এবং মজা পান। তবে এসব করে তিনি ভুল করেছেন বলে শেষে স্বীকার করেন। টিপু এখন কারাগারে।
সম্প্রতি টিপু কিবরিয়ার পর্নো ভিডিওর বিষয়টি অস্ট্রেলিয়া ফেডারেল পুলিশের নজরে এলে তারা বাংলাদেশ পুলিশকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানায়। সেই চিঠির সূত্র ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি দল ২৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে তাঁকে ও তাঁর সহযোগী কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ অ্যান্টি ইলিগ্যাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিম।
একসময়কার শিশুসাহিত্যিক টিপু কিবরিয়া এর আগেও ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তবে ওই মামলায় তিনি খালাস পান। প্রায় সাত বছর পর ২০২১ সালে তিনি কারাগার থেকে বের হন। এরপর তিনি সাহিত্যচর্চার আড়ালে আবার শিশু পর্নোগ্রাফির পুরোনো পথে হাঁটতে শুরু করেন।
১৯৯১ সালে একটি প্রকাশনীর মাসিক কিশোর পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ফ্রিল্যান্সার আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন।
গত মাসে হওয়া মামলাটির তদন্ত তদারক করেছেন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টিপু কিবরিয়া যে পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও তৈরি করতেন, তাদের একজন ১৬ বছরের এক কিশোর ২৪ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই পথশিশু আদালতকে বলেছে, তার বাড়ি পটুয়াখালী।
কয়েক মাস আগে ভাই-বোনদের সঙ্গে রাগারাগি করে সে ঢাকায় চলে আসে। সে কমলাপুর রেলস্টেশনে থাকত এবং পথশিশুদের সঙ্গে ঘুমাত। সে বোতল কুড়াত ও ভালো কাজের হোটেলে খেত। একপর্যায়ে কামরুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার কামরুল তাকে নাশতা খাওয়াতে নিয়ে যান। এরপর ভালো কাজ দেওয়ার কথা বলে শাহবাগ থেকে খিলগাঁও পার্কে নিয়ে যান। সেখানে একজন লোক এসে তাদের তাঁর বাসায় নিয়ে যান। ওই বাসায় আর কেউ ছিল না। এরপর ওই ব্যক্তি তাকে নগ্ন করে নানাভাবে ছবি তোলেন। এ সময় পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে। তখন সে জানতে পারে কামরুল এভাবে বাইরে থেকে পথশিশুদের নিয়ে এসে এই ব্যক্তির কাছে দেন। সেই সময় সে জানতে পারে এই ব্যক্তির নাম টিপু কিবরিয়া। তিনি পথশিশুদের এভাবে ছবি তুলে তা বিক্রি করে টাকা উপার্জন করে বলেও সে সময় জানতে পারে।
পুলিশ জানায়, জবানবন্দি দেওয়ার পর শিশুটি আদালতের নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছে। তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
টিপু কিবরিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার দুই দিন পর পুলিশ জানিয়েছিল তাঁর তৈরি করা পর্নো ভিডিওর গ্রাহকদের মধ্যে বিদেশিদের তালিকায় আছে ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু মানুষ। তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী টিপু কিবরিয়া ছবি তুলতেন এবং ভিডিও তৈরি করতেন। এসব ভিডিওতে যাদের ব্যবহার করা হতো, তাদের অধিকাংশই রাজধানীর গুলিস্তান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কমলাপুর রেলস্টেশনের ছিন্নমূল শিশু। এই শিশুদের জোগাড় করে দিতেন ভাঙারি ব্যবসায়ীরা।