মুনাফার ফাঁদে পড়ে, ‘অলৌকিক’ মুদ্রা দেখে প্রায় কোটি টাকা খোয়ালেন ব্যবসায়ী

অলৌকিক মুদ্রা বলে এই বস্তু দেখিয়ে আরেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল একটি প্রতারক চক্র
ফাইল ছবি

কথিত অলৌকিক মুদ্রা দেখে ও মুনাফার ফাঁদে পড়ে ৮৫ লাখ টাকা খুইয়েছেন এক ব্যবসায়ী। এই প্রতারণায় যুক্ত একটি চক্রের সদস্যরা তাঁকে ওই মুদ্রা দেখিয়ে বলেছিলেন, তাঁরা বড় ব্যবসায়ী। তাঁর ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করতে দিলে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ পাবেন তিনি। এরপর ‘৩০০ কোটি টাকার’ মুদ্রাটি বিক্রির কথা বলে তাঁর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

এ ঘটনায় ২ জানুয়ারি প্রতারক চক্রের আট সদস্যের বিরুদ্ধে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেছেন বাবুল হোসেন (ছদ্মনাম) নামের ওই ব্যবসায়ী। তবে কোনো আসামি এখনো ধরা পড়েনি।

গত বছরের ১৩ জুন বাবুল হোসেনকে নিয়ে যাওয়া হয় শরীয়তপুরে। সেখানে দেবদাস মজুমদার, মোস্তফা ও লুৎফর নামের তিনজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তখন একটি ‘অলৌকিক’ মুদ্রা দেখানো হয় তাঁকে। বলা হয়, এটি দিয়ে অসাধ্যসাধন করা সম্ভব।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরে আযম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, কয়েন (মুদ্রা) কেনাবেচা চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন পেশার মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই ব্যবসায়ীকেও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ৮৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। চক্রের সদস্যদের খুব শিগগির গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

আরও পড়ুন

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে ও মামলার কাগজপত্রের তথ্য থেকে জানা যায়, বাবুল হোসেন একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকায়। তাঁর পোশাক কারখানা গাজীপুরে। বাবুলের সঙ্গে আবদুল হান্নান ও ইশতিয়াক নামের দুই ব্যবসায়ীর দীর্ঘদিনের পরিচয়। তাঁরাও গার্মেন্টস পণ্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। একদিন হান্নান ও ইশতিয়াক তাঁকে প্রস্তাব দেন, বিদেশে টাকা পাঠানোর কাজে তাঁর ব্যাংক হিসাবটি তাঁরা ব্যবহার করতে চান। বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসা করার সুবাদে তাঁর ব্যাংক হিসাবে বিপুল অঙ্কের অর্থের লেনদেন হবে।

হান্নান ও ইশতিয়াক ওই ব্যবসায়ীকে আরও বলেন, ব্যাংক হিসাবে যত অর্থের লেনদেন হবে, তার ১০ শতাংশ তাঁরা লভ্যাংশ দেবেন তাঁকে। পরে গত বছরের ১৩ জুন বাবুল হোসেনকে নিয়ে যাওয়া হয় শরীয়তপুরে। সেখানে দেবদাস মজুমদার, মোস্তফা ও লুৎফর নামের তিনজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তখন একটি ‘অলৌকিক’ মুদ্রা দেখানো হয় তাঁকে। বলা হয়, এটি দিয়ে অসাধ্যসাধন করা সম্ভব। দেবদাস ও ডেভিড নামের দুই ব্যক্তির কাছে ৩০০ কোটি টাকায় মুদ্রাটি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত বছরের ২৭ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে বসে বাবুলকে চক্রের সদস্যরা বলেন, দেবদাস ও ডেভিডের কাছে মুদ্রাটি কেনার মতো অর্থ নেই। তখন বাবুলের কাছে টাকা ধার চান দেবদাস। বলা হয়, দুই দিন পর তাঁর ব্যাংক হিসাবে অনেক টাকা ঢুকবে। তাই ধার হিসেবে তিনি যেন ৫০ লাখ টাকা দেন। পরে প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে বাবুল ২ আগস্ট নিজ ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০ লাখ টাকা দেবদাসের কাছে তুলে দেন। দ্বিতীয় দফায় আরও ২৫ লাখ টাকা তুলে দেন তাঁকে। তবে দুই দিন তো নয়ই; বাবুলের ব্যাংক হিসাবে পরে কোনো টাকাই ঢোকেনি বা কোনো টাকা লেনদেনও হয়নি। এরপর প্রতারক চক্রের প্রধান দেবদাসসহ অন্যরা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী বাবুল গত বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে আমি বেকুব বনে গেছি। আমার কাছে দেবদাসসহ প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যরা নিজেদের বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। জানান, আমার ব্যাংক হিসাবে অনেক টাকার লেনদেন হবে, ১০ শতাংশ হারে কমিশন পাব। আমাকে তাঁরা মূল্যবান কয়েন দেখান। তাঁদের বিশ্বাস করে ৮৫ লাখ টাকা তুলে দিলাম। এরপর থেকে আমি বিপদে।’

আরও পড়ুন

অবশ্য এই গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর অভিযোগ অস্বীকার করে আসামি আবদুল হান্নান বুধবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। দেবদাস মজুমদারসহ অন্যরা কয়েন কেনার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কি না, সেটি তাঁর জানা নেই। অভিযোগের বিষয়ে জানতে আসামি দেবদাস, মোস্তফা, লুৎফর, ঝর্ণা আক্তার, আবুল কালাম ও ইশতিয়াকের মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিনব কায়দায় টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের সদস্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’

আরও পড়ুন