ছুটিতে মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে কী করবেন

আবুল কালাম আজাদছবি: সংগৃহীত

ঈদের ছুটিতে শহরের বেশির ভাগ মানুষ যখন বাড়িতে যান, তখন চুরি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গ্রিলকাটা চোরেরা যেমন সক্রিয় হয়, তেমনি ওত পেতে থাকে মোটরসাইকেল চোরেরাও। তবে সতর্ক হলে চুরি ঠেকানো সম্ভব হতে পারে।

গাড়ি চুরি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা পুলিশ সদস্যরা চুরি ঠেকাতে করণীয় কী, তা প্রথম আলোকে বলেছেন। আবার একজন ‘শীর্ষ চোর’ও প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, কী করলে চুরি করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগের গাড়ি চুরি, উদ্ধার ও প্রতিরোধ দলের দলনেতা সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে পুরো ঢাকা ফাঁকা থাকে। অনেকে বাসাবাড়ির গ্যারেজে মোটরসাইকেল রেখে গ্রামের বাড়িতে যান। এ সময় মোটরসাইকেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে চুরির আশঙ্কা তৈরি হয়।

মাহফুজুর রহমান মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে বাসায় ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখা; মোটরসাইকেলে উন্নত মানের তালা ও ‘ডিস্ক লক’ লাগানো এবং ‘অ্যালার্ম’ লাগানোর পরামর্শ দেন।

মোটরসাইকেলে ‘জিপিএস ট্র্যাকার’ লাগানোর পরামর্শও দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁর মতে, জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো হলে মোটরসাইকেল চোর শনাক্ত করা সহজ হয়।

বাংলাদেশে এখন বছরে পাঁচ লাখের মতো মোটরসাইকেল বিক্রি হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব বলছে, দেশে এখন নিবন্ধিত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪৩ লাখের কিছু বেশি।

মোটরসাইকেল যত বাড়ছে, চুরির সংখ্যাও বাড়ছে। পুলিশ বিভিন্ন সময় চোরদের ধরছে। তবে তারা জামিনে বেরিয়ে আবার চুরি শুরু করে।

যেমন ডিবির তালিকায় ‘শীর্ষ’ মোটরসাইকেল চোর আবুল কালাম আজাদ ১৩ বছরে দুই শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছেন বলে দাবি করেন। ধরা পড়েছেন অন্তত ৪৫ বার। তাঁর বিরুদ্ধে ৫৩টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে গত ডিসেম্বরে কথা বলা সম্ভব হয়েছিল। তখন তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, নিরাপত্তাব্যবস্থা নিলে মোটরসাইকেল চুরি কঠিন হয়ে যায়। মোটরসাইকেলে অ্যালার্ম লাগানো, জিপিএস ট্র্যাকার লাগানো, উন্নত মানের ‘ডিস্ক লক’ ব্যবহারের পরামর্শ তিনিও দেন।

পাশাপাশি আবুল কালাম আজাদ বিশেষ ধরনের তালা ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এই তালা ভেতরে ফাঁপা থাকে, কাঠামোটি হয় ইস্পাতের। ফলে চোর হাতুড়ি যতই আঘাত করুক, তালা ভাঙে না। তিনি বলেন, ঢালাই লোহার তালা মোটেও নিরাপদ নয়।

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেছেন, অনেকে ‘হ্যান্ডল লক’ করে মোটরসাইকেল রেখে চলে যান। এটি মোটেও নিরাপদ নয়। কারণ, এই লক ভেঙে মোটরসাইকেল চুরি করতে ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড সময় লাগে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অনেকে মোটরসাইকেলে ভালো তালা লাগালেও বাসার ফটকে থাকে সাধারণ তালা। এতে সুযোগ পেলে চোরেরা বাসার ফটকের তালা ভেঙে মোটরসাইকেল তুলে মিনিট্রাকে করে নিয়ে যায়। সতর্ক থাকতে হবে সেদিক দিয়েও।

মোটরসাইকেল একবার চুরি গেলে তা ফেরত পাওয়ার ঘটনা খুবই কম। একটি মোটরসাইকেল এখন এক লাখ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ছয় লাখ পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেতারা কয়েক লাখ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল কেনেন কিন্তু কয়েক হাজার টাকা ব্যয় করে মোটরসাইকেলের জন্য ভালো তালা ও নিজের নিরাপত্তার জন্য ভালো হেলমেট কিনতে চান না। তিনি বলেন, শুধু মোটরসাইকেল কিনলেই হবে না, নিজের নিরাপত্তার জন্য ভালো মানের হেলমেট ও মোটরসাইকেলের নিরাপত্তার জন্য ভালো সরঞ্জাম কিনতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।