‘গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গিয়ে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে’

প্রতীকী ছবি

ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মোহাম্মদ মেহেদী হাসান নামের এক ব্যক্তি। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তিনি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার একটি ভবনের পঞ্চম তলায় বসবাস করতেন। ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে গত বছরের ১৯ এপ্রিল ঢাকা থেকে খুলনায় যান। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন পাঁচ দিন পর। তখন রাত ৯টা। অনেক চেষ্টা করেও বাসায় ঢোকার প্রধান দরজার তালা খুলতে পারছিলেন না। পরে বাসার তত্ত্বাবধায়কের সাহায্য নিয়ে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। দেখতে পান, ঘরের ভেতরে মালামাল ছড়ানো–ছিটানো। ঘুমানোর কক্ষের জানালার গ্রিল কাটা। বাসার কাঠের আলমারিতে রাখা ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ল্যাপটপসহ অন্তত ১৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

যেসব ভবনের প্রবেশপথ কিংবা ফ্ল্যাটে প্রবেশের পথে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) ছিল না এবং যেসব ভবনে তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন না, এমন বাসা নিশানা করে চোরেরা। নানা সূত্রে যখন চোরেরা নিশ্চিত হয়, বাসায় স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী আছে, সেসব বাসায় চুরি হয়।

এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় মামলা করেন মেহেদী হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কল্পনাও করিনি ঈদের সময় আমার ঘরে চুরি হবে। কিন্তু ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গিয়ে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার স্ত্রীর স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী সব নিয়ে গেছে চোরেরা। আমার ল্যাপটপে থাকা কয়েক বছর ধরে তোলা বন্যপ্রাণীদের ছবিও চুরি হয়েছে। কিন্তু চুরির কিছুই উদ্ধার হয়নি।’

শুধু মেহেদী হাসান নন, গত বছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় ঢাকায় অন্তত ১৫টি চুরির ঘটনার তথ্য জানা গেছে। এসব ঘটনার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঈদের ছুটির সময় ফাঁকা বাসার দরজার তালা ভেঙে ১০টি চুরির ঘটনা ঘটে। বাকি পাঁচটি চুরি হয় জানালার গ্রিল কেটে। ভুক্তভোগী বাসার মালিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যেসব ভবনের প্রবেশপথ কিংবা ফ্ল্যাটে প্রবেশের পথে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি ক্যামেরা) ছিল না এবং যেসব ভবনে তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন না—এমন বাসা নিশানা করে চোরেরা। নানা সূত্রে যখন চোরেরা নিশ্চিত হয়, বাসায় স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী আছে, সেসব বাসায় চুরি হয়।

কয়েক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তা কাজী সাহান হক (বনানী থানার ওসি) প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যেসব বাসার গেটে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, সেসব বাসায় ঈদের সময় চুরির ঘটনা বেশি ঘটে। আবার সংঘবদ্ধ চোরের দল নানা সূত্র থেকে যখন নিশ্চিত হয় বাসায় মূল্যবান সামগ্রী আছে, তখন যেকোনোভাবেই হোক তারা বাসার দরজার তালা ভেঙে কিংবা গ্রিল কেটে চুরির ঘটনা ঘটায়।’

প্রতীকী ছবি

ঈদের সময় ফাঁকা বাসায় যত চুরি

শিরিন শীলা নামের এক নারী পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রাজধানীর পল্লবী এলাকায়। গত বছরের ঈদের আগের দিন (১৯ এপ্রিল) ঢাকা থেকে যান শ্বশুরবাড়ি। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন ২৫ এপ্রিল। দেখতে পান, বাসায় ঢোকার দরজায় লাগানো তালা ভাঙা। ঘরের ভেতরের আলমারির তালা ভেঙে পাঁচ ভরি সোনাসহ মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তিনি পল্লবী থানায় অজ্ঞাতপরিচয় চোরদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই চুরির ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

শিরিন শীলা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের সময় শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে আমার পরিবারে চরম বিপদ নেমে এসেছে। অনেক কষ্টের টাকায় কেনা আমার ও বাচ্চাদের স্বর্ণালংকারগুলো চুরি হয়ে গেছে। চোরেরা আমাদের বাসার পাশে ভাড়া থাকত। পুলিশ দুজন চোরকে ধরলেও আমার স্বর্ণালংকার উদ্ধার করতে পারেনি। এ নিয়ে আমার পরিবারে সব সময় অশান্তি লেগেই আছে।’

ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাঁরা পরিবার নিয়ে যাবেন, তাঁরা যদি বাসায় স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী রেখে যান, তাহলে সেই বাসায় চুরি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
মইনুল ইসলাম, ওসি, বংশাল থানা

আরেক নারী সবুক্তগীন আজাদ পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায়। গত বছরের ঈদুল ফিতরের দুই দিন পর তিনি ঢাকা থেকে সপরিবার বগুড়ায় শ্বশুরবাড়িতে যান। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন শেষে গত বছরের ২৭ এপ্রিল আবার ফিরে আসেন ঢাকায়। দেখতে পান, বাসার দরজার তালা ভাঙা। আলমারির তালা ভেঙে ১৫ ভরি সোনার গহনা চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। এ ছাড়া মাহবুব উর রহমানও পরিবার নিয়ে সবুজবাগ এলাকার একটি বাসার পঞ্চম তলায় বসবাস করেন। গত বছরের ঈদের চার দিন পর (২৫ এপ্রিল) তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে বেড়াতে যান চট্টগ্রামে। দুই দিন পর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। দেখতে পান, বাসার দরজার তালা ভাঙা। আলমারির তালা ভেঙে ৩৩ ভরি সোনা ও নগদ ৪০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা।

এ ছাড়া আমিনুল ইসলাম পরিবার নিয়ে রাজধানীর শ্যামপুর থানা এলাকার একটি বাসার সাততলায় বসবাস করেন। গত বছর ঈদের পরদিন পরিবার নিয়ে তিনি ঘুরতে যান সাজেকে। এর দুই দিন পর ঢাকায় ফিরে এসে দেখেন, বাসায় চুরি হয়েছে। সপ্তম তলায় জানালার গ্রিল কেটে চোরেরা বাসার আলমারিতে থাকা ২৬ ভরি সোনা চুরি করে নিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাঁরা পরিবার নিয়ে যাবেন, তাঁরা যদি বাসায় স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী রেখে যান, তাহলে সেই বাসায় চুরি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। অতীতেও আমরা দেখেছি, ঈদের সময় মূল্যাবান সামগ্রী যাঁরা রেখে গেছেন, সেসব বাসায় চুরি হয়েছে। তাই মূল্যবান সামগ্রী কোনোভাবে বাসায় রেখে ঘুরতে যাওয়া উচিত নয়।’