রপ্তানির নামে পাকিস্তানে ৭ কোটি টাকা পাচার

সাত কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পাকিস্তানি তিন নাগরিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র।

প্রতীকী ছবি

ব্যবসার কথা বলে হুন্ডির (অবৈধ লেনদেন) মাধ্যমে পাকিস্তানে টাকা পাচার করেছেন এক ব্যবসায়ী। এক মাসের কম সময়ের ব্যবধানে ৭ কোটি ২৫ হাজার টাকা পাচার করেছেন তিনি। মাসুদ আমির নামের ওই ব্যবসায়ী পাকিস্তানি নাগরিক। সিআইডি বলছে, তদন্তে মাসুদের টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মাসুদ ও তাঁর সহযোগীরা রপ্তানির নামে গলদা চিড়ি, শুঁটকি, লবণ, তৈরি পোশাক, সুপারি ও মুঠোফোনের ব্যাটারি ক্রয়ের ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে টাকা পাচার করেছেন।

মাসুদের একটি ব্যাংক হিসাবে পাঁচ বছরে ৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা জমা হয়, যার ২৯ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়। ব্যাংক হিসাবের এই লেনদেনে সন্দেহ হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ)। ব্যাংক বিষয়টি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) অনুসন্ধান করতে বলে।

অনুসন্ধান শেষে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ দমন বিভাগের তৎকালীন পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত শেষে সিআইডি ১৭ এপ্রিল মাসুদ ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া মাসুদ, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক তালহা শহীদ ও সহযোগী আবুল খায়েরকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে। আসামিদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানে রয়েছেন। একজন দেশেই পলাতক বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ওই ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে থাকা ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন। পরে ওই টাকা জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, তদন্তে অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়ার পর জড়িত চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, পাকিস্তানি নাগরিক মাসুদ আমির স্ত্রী সোফিয়া মাসুদকে নিয়ে ২০১২ সালে বাংলাদেশে আসেন। তাঁরা এস এম আবুল খায়ের নামের এক বাংলাদেশিকে সঙ্গে নিয়ে ‘দ্য ক্ল্যাসিক ফাইনেস্ট লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন করে একটি বিদেশি কোম্পানিতে সিগারেটের প্যাকেট রাখার ছোট তাক, র‍্যাকসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহকারী হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা পরিচালনার জন্য মাসুদ নিজের নামে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদপুর শাখায় একটি হিসাব খোলেন।

সিআইডির তদন্তের তথ্য বলছে, মাসুদ আমির ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে থেকে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। পরে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে পাকিস্তানে ফিরে যান। এর পর থেকে সেখানে বসে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আরেক পাকিস্তানি নাগরিক তালহা শহীদ ও সহযোগী আবুল খায়েরকে দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মাসুদ দীর্ঘদিন ব্যাংকে উপস্থিত না হওয়ার কারণে ব্যাংক নিজ উদ্যোগে হিসাবটির লেনদেন বন্ধ করে দেয়। পরে মাসুদ আবার বাংলাদেশে আসেন। ব্যাংকে আবেদন করে তিনি তালহা শহীদকে ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেওয়া ও উত্তোলনের ক্ষমতা দিয়ে আবার পাকিস্তানে ফিরে যান।

পরে পাকিস্তানে বসে তালহা ও আবুল খায়েরের মাধ্যমে মাছ, গরু, সুপারি, লবণসহ বিভিন্ন ব্যবসার পণ্য কেনার ভুয়া বিলের ভাউচার তৈরি করেন। সেই বিল দেখিয়ে মাসুদের ব্যাংক হিসাবে থাকা ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা তুলে নেন তালহা। সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেন তাঁরা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, মাসুদের সহযোগী আবুল খায়েরের বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলায়। তাঁর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। তাঁর গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, খায়ের ২০১২ সালের পর থেকে আর বাড়িতে যান না। ঢাকায় এসে তিনি পল্টনের একটি বাসায় থাকতেন। সেই বাসায় গিয়েও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে কারণে তাঁকে পলাতক দেখিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।