বিদেশ থেকে দামি পার্সেল পাঠানোর কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন তাঁরা

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়
ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন করে দামি উপহারের পার্সেল পাঠানোর নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ৫ বিদেশিসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ঢাকার মিরপুর, ভাটারা ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গ্রেপ্তার ১১ জনের মধ্যে বিপ্লব লস্কর নামের একজন রয়েছেন, যাঁকে এ চক্রের মূল হোতা বলে দাবি করেছে ডিবি।

গ্রেপ্তার অন্য ব্যক্তিরা হলেন সুমন হোসেন ওরফে ইমরান, মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন, ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল, নাজমুল হক রনি, মোসা. নুসরাত জাহান, নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি, ইম্মানুয়েল ও জন, অ্যাঙ্গোলার নাগরিক উইলসন ডা কনসিকাউ, ক্যামেরুনের নাগরিক নিগুজেনি পাপিনি।

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দেশি-বিদেশি প্রতারক চক্রের সদস্যরা বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর, ই-মেইল সংগ্রহ করেন। পরে তাঁরা ফেসবুকে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভিসহ বিভিন্ন ধরনের ভুয়া পরিচয়ে বন্ধু হওয়ার অনুরোধ পাঠিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করেন। বন্ধুত্ব স্থাপনের পর দামি উপহার ও বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোর কথা জানান চক্রের সদস্যরা। তাঁরা উপহারের পার্সেল পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে ভুয়া রসিদ ও পার্সেলের ছবি পাঠান। এরপর প্রতারিত ব্যক্তিরা পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় থাকেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, পার্সেলের অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিকে প্রতারক চক্রের সদস্যরা শুল্ক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন দেন। তাঁরা বলেন, কাস্টম হাউস থেকে পার্সেল ছাড়াতে মোটা অঙ্কের অর্থ লাগবে। এ অর্থ পরিশোধের জন্য তাঁরা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর মেসেজ করে পাঠান। প্রতারিত ব্যক্তি বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেল পাওয়ার আশায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ পরিশোধ করেন। কিন্তু টাকা পরিশোধের পর শুল্ক কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি আবারও ফোন করেন। জানান, ওই পার্সেলে অবৈধ মালামাল পাওয়া গেছে। এটি ছাড়াতে আরও বেশি অঙ্কের টাকা প্রয়োজন। টাকা না দিলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিংসহ অন্যান্য আইনে মামলার ভয় দেখানো হয়। এ অবস্থায় প্রতারিত ব্যক্তি মামলার ভয়ে প্রতারক চক্রের সদস্যদের দাবি করা টাকা পাঠান। দুই দফা টাকা নেওয়ার পর চক্রের সদস্যরা আবারও ফোন করেন। তাঁরা বলেন, পুলিশ ও সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাঁদের ম্যানেজ করতে বড় অঙ্কের টাকা প্রয়োজন। এ দফায় টাকা পাওয়ার পর ওই ব্যক্তির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন ‘বিদেশি বন্ধু’।

এ ধরনের প্রতারণার কাজে জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা পাসপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাংকে অসংখ্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ঢাকার ডিবিপ্রধান বলেন, অ্যাকাউন্টের কার্ড ও চেক বই নিজেদের কাছে রেখে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথ ও ব্যাংকের শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করেন চক্রের সদস্যরা। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে প্রতারণার মাধ্যমে পাওয়া টাকা উত্তোলন, ভাগ-বাঁটোয়ারা করেন বিপ্লব লস্কর। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল ও রূপনগর থানায় মামলা করা হয়েছে।