গুম নিয়ে স্বাধীন তদন্তের বিষয়টি আবার এল মানবাধিকার পরিষদে

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির হালনাগাদ চিত্র উপস্থাপন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ
এএফপি

বাংলাদেশে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকারকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর। এ তথ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে জানানো হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গতকাল সোমবার মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনের সূচনায় ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ওই তথ্য জানান। তিনি বাংলাদেশে গত মাসে তখনকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের সফরের কার্যক্রমের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।

৪৭ সদস্যের মানবাধিকার পরিষদে নাদা আল নাশিফ জানান, গত মাসে মিশেল ব্যাশেলেত বাংলাদেশে তাঁর প্রথম সফরের সময়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেছেন এবং সামগ্রিকভাবে সব উদ্বেগের বিষয় কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছেন। সাবেক হাইকমিশনার ডিজিটাল জগতে মতপ্রকাশ রুদ্ধ করে এমন আইনগুলো পর্যালোচনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

অনলাইন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন ও প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন এবং ওটিটি নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানসম্মত করার জন্য কমিশনের সহায়তার প্রস্তাবের কথা ব্যাশেলেত তাঁর সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেছিলেন।

নাদা আল নাশিফ জানান, মিশেল ব্যাশেলেত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিশেষ করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিরুদ্ধে জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন, বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য দেশটির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এবং ওই কাজে সাহায্য করার কথাও বলেছেন।

যদিও সরকার দেশে গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

জেনেভায় গত ২৫ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে মিশেল ব্যাশেলেত তাঁর বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু না বলায় সরকারে একাধিক মন্ত্রী দাবি করেছিলেন যে তাঁদের ব্যাখ্যায় কমিশনার ব্যাশেলেত সন্তুষ্ট হওয়ায় কমিশনের বাংলাদেশ নিয়ে আর কোনো উদ্বেগ নেই।

আরও পড়ুন

ওই সব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গত ৩১ আগস্ট কমিশনের মুখপাত্র আলাদা বিবৃতি দিয়ে জানান যে হাইকমিশনার ব্যাশেলেত বাংলাদেশ সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বিবৃতিতে যেসব কথা বলেছেন, তাতে কমিশনের অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। মানবাধিকার পরিষদে হালনাগাদ বৈশ্বিক পরিস্থিতির যে বিবরণ ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ পেশ করেছেন, তাতে সংক্ষেপে সেই উদ্বেগগুলো তুলে ধরে কমিশনের সহায়তার প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি করা হলো।

নাদা আল শরিফ তাঁর বক্তব্যে আগামী নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মেরুকরণের পরিবেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তিনি একই সঙ্গে বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন।

মানবাধিকার সংগঠক, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে এমন ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ বা তাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ না করার জন্যও তিনি তাঁর বক্তব্যে আহ্বান জানিয়েছেন। হাইকমিশনার ব্যাশেলেতের সফরের পর মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’–এর নিবন্ধন বাতিলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক আপিল সরকার নাকচ করে দিয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার তাঁর বক্তব্যে বিশ্বের অন্য যেসব দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, সেগুলোর সর্বসাম্প্রতিক অবস্থাও পরিষদের সভায় তুলে ধরেন। তিনি বৈশ্বিকভাবে যুদ্ধের গুরুতর আর্থসামাজিক পরিণতিতে দরিদ্র দেশগুলোতে জ্বালানির তীব্র ঘাটতি এবং খাদ্যনিরাপত্তার হুমকির কথা বলেন।

পরিষদের এই অধিবেশন চলবে আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত। গতকাল দিনের পরের দিকে মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে কমিশনের আলাদা প্রতিবেদন পেশ ও তা নিয়ে আলোচনার কথা ছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে মিশেল ব্যাশেলেতের স্থলাভিষিক্ত হবেন অস্ট্রিয়ার ভয়েকার টুর্ক। ৮ সেপ্টেম্বর তাঁর নিয়োগ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হলেও কবে তিনি দায়িত্ব নেবেন, তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।