তুরস্কের সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বাবা-ছেলের প্রতারণা

তুরস্কে চাকরির কথা বলে ২০ ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের মো. ফাহাদ হাসান সিয়াম (বাঁয়ে) ও তাঁর বাবা কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের সেনাবাহিনীর অধীন লোক নিয়োগের কথা বলে ২০ ব্যক্তির কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাবা-ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কামরুল হাসান (৬৫) ও তাঁর ছেলে মো. ফাহাদ হাসান সিয়াম (২৭)। তাঁদের কাছ থেকে চারটি মুঠোফোন, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড, প্যাড সিল, দুটি কম্পিউটার, বিদেশে পাঠানোর জন্য ভুয়া নিয়োগপত্র ও ভিসা জব্দ করা হয় বলে ডিবি জানিয়েছে।

আজ রোববার রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিলে গ্রেপ্তার দুজনের সঙ্গে পরিচয় হয় সুনামগঞ্জের ছাতকের বাসিন্দা সহিদুল ইসলামের। পরিচয়ের একপর্যায়ে কামরুল হাসান বলেন, তুরস্কে সরকারিভাবে সেনাবাহিনীর অধীন অনেক লোক নিয়োগ করা হবে, সহিদুলকে সেখানে তিনি পাঠাতে পারবেন। সহিদুল তুরস্কে গিয়ে এই চাকরি করে ভালো বেতন পাবেন। কামরুলের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান সহিদুল। তবে তুরস্কে যেতে সহিদুলকে সাত লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান কামরুল। প্রাথমিকভাবে সাড়ে তিন লাখ টাকা তিনি কামরুলকে দেন।

সহিদুলের মতো আরও ১৯ জনকে এই ফাঁদে ফেলেছিলেন নারায়ণগঞ্জের এই পিতা-পুত্র। ডিবি কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ বলেন, চুক্তি মোতাবেক ২০২০ সালের ৭ মে কামরুল ও তাঁর ছেলেকে ২০ জন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দেন। টাকা দেওয়ার পর তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাও (মেডিকেল) করানো হয়। এর কিছুদিন পর কামরুল ও সিয়াম সবাইকে বলেন, এখন তুরস্কে লোক পাঠানো যাবে না। তাই তাঁদের সবাইকে মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। এই কথা বলে কামরুল ও সিয়াম তাঁদের কাছ থেকে আরও ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন।

সংবাদ সম্মেলনে হারুন-অর-রশীদ আরও বলেন, তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাউকেই বিদেশ পাঠাতে পারেননি কামরুল ও সিয়াম। টাকা নিয়ে তাঁদের ওয়ারীর অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যান। মূলত ওয়ারীর অফিসেই টাকা দিয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা। টাকা নেওয়ার পর সাধারণ মানুষদের সঙ্গে বাবা-ছেলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কেউ টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেন। একপর্যায়ে গোপনে তাঁদের অফিস পরিবর্তন করে ফেলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি জানায়, কামরুল ও তাঁর ছেলে সিয়াম ভুক্তভোগীদের বলতেন, তাঁদের চার থেকে পাঁচটি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠানের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাঁদের কোনো লাইসেন্স নেই। ভুয়া লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছিলেন। এ ছাড়া বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য তাঁরা বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস ভাড়া নিতেন।

যেভাবে প্রতারক হয়ে ওঠেন কামরুল
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি জানায়, কামরুল হাসান ১৯৯৮ সাল থেকে ১০ বছর মালয়েশিয়ায় কাটান। দেশে ফিরে ২০০১ সালে থেকে আল-রিফাত ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকরি করতেন। ২০২২ সালে এজেন্সিটির মালিক মারা যাওয়ার পর তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। প্রতারণা করে তিনি তুরস্ক, কানাডা, সার্বিয়া, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে এই পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন বিদেশে যেতে আগ্রহী ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তাঁদের মেডিকেল করানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নেন। ভিসা প্রক্রিয়ার কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ লাখ থেকে শুরু করে ৩০-৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন এই বাবা-ছেলে।