ঘটনার বিবরণ প্রায় একই, ভিন্ন শুধু আসামির নাম 

চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে তিনটি মামলায় আসামি বিএনপির ৪০৬ নেতা-কর্মী।

দুটি মামলার ঘটনাস্থল দুই উপজেলায়। কিন্তু মামলার এজাহারে ঘটনার বিবরণ প্রায় একই। শুধু ভিন্ন আসামির নাম ও সময়। মামলার দুই বাদীই ককটেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনেন ও পেট্রলবোমার আগুনের ফুলকি দেখতে পান। শোনেন সরকারবিরোধী একই স্লোগানও। চট্টগ্রামের পটিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া দুটি মামলায় এমনটি বলা হয়েছে। বাদী স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতা।

আরও পড়ুন

সাত দিনের ব্যবধানে চলতি জুলাই মাসে মামলা দুটি হয়। বিএনপির নেতাদের দাবি, এসব ‘গায়েবি মামলা’। এসব মামলার উদ্দেশ্য, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঘরছাড়া করা। স্থানীয় লোকজন ও মামলার আলামত জব্দ তালিকার সাক্ষীরাও বলছেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা সম্পর্কে তাঁরা জানেন না।

একইভাবে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জেও এ ধরনের একটি মামলা হয়েছে দাবি বিএনপির নেতা-কর্মীদের। তিন মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ৫৬ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতপরিচয় আসামির সংখ্যা ৩৫০।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশে এ রকম অসংখ্য মামলা হয়েছিল পুলিশ বাদী হয়ে। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর ও জেলার ৩২ থানায় নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়েছিল ২৩২টি।

নির্বাচনের আগে এসব মামলা রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করবে, যার ফল কখনোই ভালো হবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী

দুই মামলার বর্ণনা একই

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার  গিরি চৌধুরী বাজার। সেখানে ১৪ জুলাই রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৬০ থেকে ১৭০ নেতা-কর্মী সরকারের পদত্যাগ দাবি করে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামকে দেখতে পেয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। এ সময় তিনি ককটেলের বিকট শব্দ শোনেন ও পেট্রলবোমার আগুনের ফুলকি দেখতে পান। নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে করা মামলার এজাহারের বর্ণনা এটি।

একইভাবে লোহাগাড়ার মামলাটি হয় ২২ জুলাই। ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয় রাত ৭টা ৫০ মিনিট। এটির বাদী লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এ কে এম আসিফুর রহমান। ঘটনাস্থল লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের লিচু মিজ্জির ঘাটা পাকা রাস্তা।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশে এ রকম অসংখ্য মামলা হয়েছিল পুলিশ বাদী হয়ে। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর ও জেলার ৩২ থানায় নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়েছিল ২৩২টি।

পটিয়া ও লোহাগাড়ার দুটি মামলায় নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ৪০ জনকে। তাঁরা সবাই স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী। এ ছাড়া দুই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৩২০ জনকে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিস্ফোরিত বোমার অংশবিশেষসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করে।

পটিয়ার মামলায় জব্দ তালিকায় সাক্ষী রাখা হয় মো. ইউসুফ নামের স্থানীয় এক বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে। তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি পুলিশের গাড়ি। তাঁরা আমাদের দাঁড় করিয়ে একটি কাগজে সই করতে বলেন। আমি সই করেছি।’ এ ছাড়া আশপাশের কমপক্ষে আটজন বাসিন্দা জানান, এ ধরনের ঘটনা তাঁরা শোনেননি।

আরও পড়ুন

লোহাগাড়ার ঘটনায় জব্দ তালিকায় সাক্ষী রাখা হয় ছাত্রলীগ নেতার তিন সহযোগীকে। তবে কথা হয় লিচু মিজ্জির ঘাটা এলাকার আশপাশের অন্তত ১২ জনের সঙ্গে। তাঁরা এ ধরনের ঘটনার কথা জানেন না। দুটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলছেন, তদন্তের আগে কিছু বলা যাবে না।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, গায়েবি মামলার কারণে বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না নেতা-কর্মীরা।

নোয়াখালীর মামলায় বাদী পুলিশ

দেড় মাস আগে গত ২ জুন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয়ের আসামি রাখা হয়েছে ৩০ জনকে। বেগমগঞ্জ থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেছিলেন। 

এ নিয়ে কৃষ্ণরামপুরে ১২ জনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁদের কেউই পুলিশের উল্লেখিত ঘটনার দিন জমায়েত কিংবা পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার কথা ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনেননি। এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর জাহেদুল হক বলেন, আসামিরা কখনো ঘটনা স্বীকার করেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরীবলেন, নির্বাচনের আগে এসব মামলা রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করবে, যার ফল কখনোই ভালো হবে না।