গুলশানে চাঁদা নিতে গিয়ে ধরা পড়া রাজ্জাকের বাসা থেকে সোয়া ২ কোটি টাকার চেক উদ্ধার: ডিএমপি

আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদের ঢাকার ভাড়া বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ডিএমপির নিয়মিত তথ্য জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর নাখালপাড়ায় রিয়াদের ভাড়া বাসা থেকে চারটি চেক উদ্ধার করা হয়। চেকে মোট টাকা ২ কোটি ২৫ লাখ। এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় আলাদা একটি মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় সংগঠন থেকে তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উদ্যোগে কয়েক মাস আগে ছাত্রসংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ। এই সংগঠন হওয়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত ফেব্রুয়ারিতে সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল, সেই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছিল আবদুর রাজ্জাককে।

এক প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী আগেই যদি পুলিশকে জানাতেন, তাহলে এ অপরাধ ঠেকানো যেত। পুলিশ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে, কী কারণে তাঁরা চাঁদা দিয়েছিলেন। তাঁদের কোনো দুর্বলতা ছিল কি না।

গুলশানে চাঁদাবাজির সঙ্গে আর কেউ জড়িত কি না, জানতে চাইলে তালেবুর রহমান বলেন, কারও দলীয় পরিচয় মুখ্য বিষয় নয়। তদন্ত চলছে। আর কেউ জড়িত আছে কি না, তা তদন্তে জানা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মহানগরীতে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

তালেবুর রহমান জানান, ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০টি থানা এলাকায় জননিরাপত্তা বিধানে দুই ধাপে ডিএমপির ৪৭১টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে। যার মধ্যে রাতে ২৫৯টি ও দিনে ২১২টি টিম দায়িত্ব পালন করে। টহল টিমগুলোর মধ্যে রয়েছে মোবাইল পেট্রোল টিম ২১২টি, ফুট পেট্রোল টিম ২০টি ও হোন্ডা পেট্রোল টিম ২৭টি। এ ছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বাড়াতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি কর্তৃক ৬৬টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ১৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছে ১ জন ডাকাত, ৫ জন চোর, ১৩ জন মাদক কারবারি, ২ জন প্রতারক ও ১২ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত অপরাধী। অভিযানে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত ১১টি মুঠোফোন, একটি বাস ও নগদ ১৩ হাজার ১৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ১০ হাজার ৬৫ পিস ইয়াবা, ১ কেজি ৪০ গ্রাম গাঁজা, ৭৪ বোতল ফেনসিডিল ও এক গ্রাম হেরোইন মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৩টি চুরি হওয়া মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলাদা আরেক অভিযানে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের একটি দল কবজি কাটা আনোয়ার গ্রুপের দুই সদস্য মোহাম্মদ নিশাত (২২) ও মোহাম্মদ রাসেল ওরফে পেস্টিং রাসেলকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত ১ জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ডিএমপির ৫০টি থানায় ডাকাতি ৩৩টি, ছিনতাই ২৪৮টি, খুন ১৫৪টি, চুরি ১ হাজার ৬৮টি রুজু হয়েছে। এ মুহূর্তে ডিএমপিতে ৭ হাজার ৮১২টি মামলা তদন্তাধীন।

তালেবুর রহমান জানান, রাজধানী ঢাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ২ হাজার ৮৪৫টি মামলা করেছে ডিএমপির আটটি ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে ২৮২টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৯২টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ‎১১ দিনের বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশনার বিষয়ে তালেবুর রহমান বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিএমপি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কেউ যদি চেষ্টা করে, তাহলে আইন অনুযায়ী মোকাবিলা করা হবে। এর বাইরে গোয়েন্দা তথ্য কাজে লাগিয়ে আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে ডিএমপি।

হঠাৎ সতর্কতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করে সতর্কতা জারির সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, থানায় দেনদরবার করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বাদী বা আসামি চাইলে মীমাংসার বিষয় আলোচনা করতে পারেন। এর বাইরে থানায় বসে দেনদরবার করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‎মোহাম্মদপুরে ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রয়েছে। এর বাইরে কিছু অপরাধ যে ঘটছে না, তা নয়। তবে ঘটনা ঘটলে তাঁরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও সহনীয় মাত্রায় রাখতে কাজ করছেন। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সামনে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ সদস্যদের মনোভাব ইতিবাচক রয়েছে।

আরও পড়ুন