চাঁদার টাকায় মোটরসাইকেল কেনেন জানে আলম

গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা জানে আলম ওরফে অপুছবি: ডিএমপি

গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা নেওয়ার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা জানে আলম ওরফে অপু।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট জামশেদ আলম আজ বুধবার জানে আলমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর আগে জানে আলমকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জানে আলম ওরফে অপু আদালতে স্বীকার করেছেন, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেন তাঁরা। চাঁদার পাঁচ লাখ টাকা তিনি নেন। চাঁদার টাকায় তিনি একটি ইয়ামাহা এফজেড মোটরসাইকেল কেনেন।

চাঁদাবাজির টাকায় কেনা জানে আলমের সেই মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এ মামলায় এর আগে গত রোববার গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদ দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজির টাকা আনতে গিয়ে গত ২৬ জুলাই রাতে গ্রেপ্তার হন আবদুর রাজ্জাকসহ পাঁচজন। তাঁরা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। আবদুর রাজ্জাক ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। পরে তাঁকে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য করা হয়। চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই রাতে আবদুর রাজ্জাকসহ অন্যদের বহিষ্কার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। জানে আলম সে সময় গ্রেপ্তার না হলেও এ ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে তাঁকেও বহিষ্কার করা হয়।

পরে গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জানে আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ জুলাই গুলশানে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেন আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজন। তাঁরা শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সিদ্দিক আবু জাফর তাঁদের ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেন।

আরও পড়ুন

২৬ জুলাই রাতে চাঁদার বাকি টাকা আনতে আবার ওই বাসায় যান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে রাজ্জাকসহ পাঁচজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বাকি চারজন হলেন ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাপ্তবয়স্ক চার আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আর প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আরেকজনকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠান আদালত।

পুলিশ জানায়, শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার পর রাজ্জাকসহ কয়েকজন তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন। নিজের ভাগের পাঁচ লাখ টাকা রাজ্জাক তাঁর বাড্ডার ভাড়া বাসায় (মেস বাসা) রাখেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।