২৬ মাস পার, ই-অরেঞ্জের সোহেল রানাকে দেশে ফেরানো যায়নি
ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা ভারতে আটক হওয়ার পর ২৬ মাস পেরিয়ে গেছে। এখনো তাঁকে দেশে ফেরত আনা যায়নি। পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে, তাঁকে ভারত থেকে দেশে ফেরানোর বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সোহেল রানা ভারতে পালিয়ে যান। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে তিনি সেখানকার কারাগারে আছেন। প্রতারণার ঘটনার পর সোহেল রানাকে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তিনি নেপথ্যে থেকে ই-অরেঞ্জ নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সোহেল রানা ভারতে পালিয়ে যান। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে তিনি সেখানকার কারাগারে আছেন।
বিদেশ থেকে অপরাধী ফিরিয়ে আনা, অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ, আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্ব পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি)। যোগাযোগ করা হলে এনসিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে হওয়া মামলায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানার দুই বছরের কারাদণ্ড ও ৪০ হাজার ভারতীয় রুপি জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আলীপুরের কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। সোহেল রানার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি থাকায় তাঁকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।’
পুলিশ বলছে, ঢাকায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে মোট ৯টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার বিচার কার্যক্রমের সময় তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা জরুরি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারত ও বাংলাদেশ—দুই দেশের আইনে অনুপ্রবেশ একটি সুনির্দিষ্ট অপরাধ। সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে এনে বিচার করার সুযোগ আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুরুতে সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এ নিয়ে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তর ভারতের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে আট দফা চিঠি চালাচালি করে। এরপর আর তাদের তৎপরতা সম্পর্কে জানা যায়নি। পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কিছু জানাতে পারছেন না।
২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম দুজনই জানিয়েছিলেন, সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
মামলাগুলোর অবস্থা
গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দেশের যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেগুলোর একটি ই-অরেঞ্জ। ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা হয়। এরপর সোহেল রানার নাম আলোচনায় আসে।
বর্তমানে সোহেল রানা, তাঁর কথিত স্ত্রী নাজনীন নাহার, বোন সোনিয়া মেহজাবিন ও ভগ্নিপতি মাশুকুর রহমানের নামে মোট ৯টি মামলা আছে। এসব মামলায় প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচারসহ (মানি লন্ডারিং) বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। সোহেলের বোন সোনিয়া ও ভগ্নিপতি মাশুকুর সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আর সোহেল রানার কথিত স্ত্রী নাজনীন নাহার পলাতক।
সোহেল রানা বিরুদ্ধে হওয়া ৯টি মামলার মধ্যে চারটির তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার। এসব মামলার তদারক কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতারণা করে গ্রাহকের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোহেল রানা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি চারটি মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ বলছে, ঢাকায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে মোট ৯টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার বিচার কার্যক্রমের সময় তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা জরুরি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারত ও বাংলাদেশ—দুই দেশের আইনে অনুপ্রবেশ একটি সুনির্দিষ্ট অপরাধ। সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করে বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে এনে বিচার করার সুযোগ আছে।
সোহেল রানার বিরুদ্ধে হওয়া মানি লন্ডারিং আইনের মামলা তদন্ত করছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল স্কোয়াড। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল স্কোয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে হওয়া মামলার তদন্ত শেষ হতে আরও ছয় মাস লাগবে।
তবে এর আগে গত জানুয়ারি মাসে এ মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলী প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তিনি এনসিবিকে একাধিক চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সোহেলকে রানাকে ফেরত আনার অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি জানেন না। তবে মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, সোহেলের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই তথ্যও এসেছে। তখন পর্যন্ত সোহেল রানার বিরুদ্ধে ২৫০ কোটি টাকার অপরাধলব্ধ আয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলেন ওই কর্মকর্তা।
সোহেল রানার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অন্য চারটি মামলা তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এসব মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন ডিএমপির তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা।